আগাম বর্ষাকালীন সবজি ধুন্দল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন লালমনিরহাটের সবজি চাষিরা। লালমনিরহাটে প্রায় ৪০টি গ্রামের কৃষকের প্রধান ফসল নানা জাতের সবজি। এই গ্রামের মধ্যে- শিয়ালখাওয়া, চাঁপারহাট, ভোটমারী, দৈখাওয়া, সিঙ্গিমারী, কুমড়িরহাট, চন্দনপাট, বড়কমলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, চণ্ডীমারি, কর্ণপুর, দুড়াকুটি, ফুলগাছ, কোদালখাতা, ভাটিবাড়ী, কাকেয়া টেপা, বনগ্রাম, শিবেরকুটি অন্যতম। এসব এলাকায় এখন ধুন্দল চাষ হচ্ছে। এছাড়াও লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ছড়িয়ে আছে ধুন্দল ক্ষেত। এসব ক্ষেতের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে হলদে ফুল। সবুজ পাতা আর হলদে ফুলের মাঝে জড়িয়ে আছে ধুন্দল।
ধুন্দল চাষ গ্রামবাসীর আত্মকর্মসংস্থানসহ অনেকের বাড়তি আয়ের উপায় হয়ে উঠেছে। এক সময় ঝোপঝাড়ে প্রাকৃতিকভাবে ধুন্দল গাছ গজিয়ে উঠত। আর সেখানে এখন বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দলের চাষ হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের কৃষক পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এলাকায় কমেছে বেকারত্ব। লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন গ্রামে বহু বছর ধরেই ধুন্দল চাষ হচ্ছে। আগে কম চাষ হতো। প্রায় ১০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দল চাষ শুরু করেন এলাকার সবজি চাষিরা। এবারও ধুন্দল চাষ হয়েছে। কম খরচে স্বল্প সময়ে ফলন অধিক হওয়ায় এখন এখানকার প্রায় অধিকাংশ পরিবার ধুন্দল চাষ করছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কৃষকরা মাঠের পরিচর্যা করছেন। বিক্রয়ের জন্য ধুন্দল কাটছেন অনেকে। কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউবা আবার পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক দিচ্ছেন। এক মুহূর্ত যেন দম ফেলার সময় নেই চাষিদের। কৃষকরা জানান, বীজ রোপণের ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর শুরু হয় ফসল তোলা। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ফসল উৎপাদন করা যায়। আগাম তোলা ফসল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন ২৫ থেকে ৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন চাষিরা ধুন্দল নিয়ে হাট-বাজারে যান। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে ধুন্দল বিক্রি করেন। কোনো কোনো পাইকার ক্ষেত থেকেও ফসল নিয়ে যান। এক বিঘা ক্ষেতে প্রায় ৫০ মণ ধুন্দল ফলে। প্রতি বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ এবং ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় হয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধুন্দলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম এবং চাষ লাভজনক হওয়ায় ধুন্দল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি।
ফুলগাছ এলাকার ধুন্দল চাষি করিম মিয়া বলেন, আমি প্রতিনিয়ত সবজি ক্ষেত করে থাকি, বর্তমান অবস্থায় আমার অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ধুন্দল ক্ষেতও আছে। আমি জৈব ও সামান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করি আর নিজে পরিশ্রম করে এ সবজির চাষ করেছি। যা নিজের চাহিদা মিটিয়ে হাটে-বাজারেও বিক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি।
পার্শ্ববর্তী কোদালখাতা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে অল্প জমিতে ধুন্দল চাষ করতাম। এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করি।
কৃষক সাইফুল ইসলাম ও আইয়ুব আলী জানান, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। ধুন্দল চাষ করে কম-বেশি সবাই লাভবান হয়েছেন। ধুন্দলে রোগবালাই কম হয়, তেমন কোনো সমস্যাও নেই। আগাম চাষের প্রথম দিকে পানির কিছুটা সংকট থাকে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হয়। তাদের পরামর্শ নিয়ে পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জায়গায় ধুন্দল চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাচ্ছি। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবার লাভ বেশি হবে।
লালমনিরহাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব বলেন, ব্যাপক জমিতে ধুন্দল চাষ হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দল চাষের প্রসার ঘটে এখানে। এখন প্রায়ই সব পরিবারই ধুন্দল চাষের সঙ্গে যুক্ত। চাষিরা জমি ফেলে রাখতেন। এখন সেই জমিতে ধুন্দল চাষ করে লাভবান তারা। জেলার কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস এখন সবজি চাষ বলেও জানান তিনি ।