পাট তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ। পাটগাছের ছাল থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। আমাদের দেশে পাটকে সোনালি আঁশও বলা হয়। একসময় পাটগাছ শুধুই আঁশের উৎস হলেও, বর্তমানে পাটশাকও হয়ে উঠেছে লাভজনক ।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম পাটশাক বিক্রি করে অতিরিক্ত লাভের মুখ দেখছেন। তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে পাটশাক চাষ করে এরইমধ্যে প্রায় ১০ হাজার টাকার শাক বিক্রি করেছেন। তার ধারণা, আরও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার শাক বিক্রি করতে পারবেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টাকায় প্রতি মুঠা পাট শাক বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারে। শহিদুল জানান, পাটশাক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী দো-আঁশ মাটি, তবে বেলে দো-আঁশ বা এঁটেল মাটিতেও এটি ভালো হয়। জমি আগাছামুক্ত করে সমানভাবে প্লট তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বপনকাল। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা সম্ভব। গাছ ৩৫-৪৫ দিন বয়স হলেই শাক খাওয়ার উপযোগী হয়। আরেক কৃষক আসাদ বলেন, একসময় পাটশাকের কোনো চাহিদা ছিল না, ফেলেই দিতাম। তিতা হওয়ায় গরু-বাছুরও খেত না। এখন মানুষ পাট শাকের উপকারিতা বুঝে কিনছে। দিন দিন বাজারে চাহিদা বেড়েই চলছে। পাটশাক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ঠান্ডা-কাশি উপশমে সহায়ক এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক, পেটের সমস্যা ও দীর্ঘস্থায়ী হজম সমস্যার জন্যও এটি অত্যন্ত উপকারী। ভাজি, ডালের সঙ্গে বা তরকারি হিসেবে এটি খাওয়া যায়। বাংলাদেশে এখন অনেক পরিবারেই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পাটশাক যুক্ত হয়েছে।
শুধু স্বাস্থ্যগুণ নয়, আর্থিক দিক থেকেও পাটশাক চাষ দিন দিন লাভজনক হয়ে উঠছে। এক বিঘা জমিতে পাট আঁশ চাষে ব্যয় হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা, যেখানে মণপ্রতি আঁশের দাম ১৬০০-১৮০০ টাকা। এতে লাভের সম্ভাবনা খুবই সীমিত থাকে। অন্যদিকে, পাটশাক চাষে একই জমি থেকে দ্বিগুণ আয় সম্ভব, তাও কম সময়ে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আমিনা খাতুন বলেন, জেলায় এবারও পাট চাষ হয়েছে। কিন্তু নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাট পচানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কম লাভের কারণে কৃষকরা পাট আঁশ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই এখন পাটশাক চাষে ঝুঁকছেন। এর মাধ্যমে কৃষকরা অল্প সময়ে ভালো আয় করছেন।
