গ্রীষ্মকালিন টমেটো চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কুষ্টিয়ার বর্গাচাষী হারুন অর রশীদ। কৃষির এই সফলতা সচ্ছলতা এনেছে হারুনের পরিবারে। ৪ ছেলে মেয়ের সবাই পড়ালেখা করছে। নিজের আবাদি জমি না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে হারুন এখন এলাকার কৃষকদের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের মাঠের পিচঢালা রাস্তার পাশেই পলিথিনের শেড দিয়ে ঢাকা হারুন অর রশীদের দৃষ্টিনন্দন টমেটো ক্ষেত। মানুষ সমান উঁচু সারিবদ্ধ টমেটো গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত থোকা থোকা টমেটো শোভা পাচ্ছে। অনেকেই শখের বসে টমেটো ক্ষেত দেখতে এসছেন। ওই ক্ষেতে দাঁড়িয়ে কথা হয় সফল টমেটো চাষী হারুন অর রশীদের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজের কোন আবদি জমি নেই তার। তিনি বরাবর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালান। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে প্রথম গ্রীষ্মকালিন টমেটো চাষ করে তিনি সফলতার মুখ দেখেন। পরের বছর তিনি প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে এই সবজি আবাদ করেন। এবার ২০২৫ সালে তিনি ১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন।
তিনি জানান, গত এপ্রিল মাসে ক্ষেতে টমেটোর চারা রোপন করেন। মে মাসের মাঝামাঝি টমেটো গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে অল্প কিছু টমেটো উঠছে। যা নিজেদের খাওয়া সহ বিক্রি হচ্ছে। তিনি আশার করছেন জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের পর ক্ষেত থেকে টমেটো উত্তোলন করে বাজারজাত করতে শুরু করবেন। আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে টমেটো পাওয়া যাবে বলে জানান সফল আদর্শ কৃষক হারুন। প্রতি কেজি টমেটো এখন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। দেশের বাইরে থেকে আমদানী করা টমেটো এখন বাজারে পাওয়া গেলেও তার ক্ষেতের টমেটোর চাহিদা বেশি বলে ক্রেতাদের কাছে। হারুন বলেন, ১ বিঘা জমি তিনি ১০ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছেন। আর বাঁশের কাঠামো দিয়ে পলিথিনের শেড তৈরী থেকে জমি তৈরী, চারা রোপন ও পরিচর্যা মিলিয়ে খরচ হয়েছে মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। গাছে যে পরিমান ফল এসেছে তাতে বাজার দর ঠিক থাকলে ৪ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রির আশা করছেন হারুন।
তিনি আগামী বছর আরও বেশি জমিতে টমেটো চাষ করবেন বলে জানান। স্ত্রী নারগিস বেগমও নানাভাবে সাহায্য করেন হারুনকে। স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টমেটো ক্ষেতে কাজ করেন নারগিস। বিশেষ করে ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার কাজটা নারগিস বেশী করেন। নারগিস বেগম জানান, অন্য ফসল আবাদ করলেও টমেটোতে তারা বেশি সাফল্য পেয়েছেন। তাদের ৪ ছেলে-মেয়ের সবাই পড়ালেখা করছে। সংসারে এখন আর কোন অভাব নেই। এদিকে, গ্রীষ্মকালিন টমেটো চাষে হারুন অর রশীদের সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও। তার দেখাদেখি এলাকার আরও দুজন কৃষক এবার স্বল্প পরিসরে এই টমেটো চাষ করেছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রূপালি খাতুন জানান, তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালিন টমেটো চাষে কৃষি বিভাগ নানা প্রনোদনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে।