গাজা ইস্যুতে দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি বেশ সোচ্চার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। কিছুদিন আগেই তিনি গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ ও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে তার দেশ স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দেন। তারই জেরে এবার তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া শুধু একটি নৈতিক দায়িত্বই নয়, বরং রাজনৈতিক প্রয়োজনও বটে। গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুরে ‘শাংরি-লা ডায়ালগ’ নিরাপত্তা সম্মেলনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি যদি অবিলম্বে উন্নত না হয়, তাহলে ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত ইসরাইলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান আরও কঠোর করা। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমাদের সামনের কয়েকটা ঘণ্টা ও দিনের মধ্যেই কাজ সারতে হবে।’ তার ভাষায়, ‘ইসরাইল যদি যথাযথ প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তাহলে আমাদেরকে মানবাধিকার রক্ষার ধারণাকে ত্যাগ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথেই যেতে হবে’। গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকা ইসরাইলের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। এ সময় গাজায় খাদ্যবাহী ট্রাক লুটপাটের ঘটনা উল্লেখ করে ম্যাক্রোঁ বলেন, এটি মানবিক সহায়তা বণ্টনের গভীর সমস্যার প্রমাণ। এএফপি জানায়, শুক্রবার রাতেই সিঙ্গাপুরের ওই সম্মেলনে মূল ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে ম্যাক্রোঁর। এ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত রয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা, কূটনীতিক এবং সামরিক কর্মকর্তারা। ফরাসি ভূ-কৌশল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর: ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে ফ্রান্সের প্রকাশিত কৌশলে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও আগ্রাসী ভূ-দাবির প্রেক্ষাপটে ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষার’ ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের নিজস্ব ১৬ লাখেরও বেশি নাগরিক এ অঞ্চলের বিভিন্ন অতিপ্রশান্ত উপনিবেশে বসবাস করেন। যার ফলে এ অঞ্চলের সঙ্গে প্যারিসের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। ম্যাক্রোঁ বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক কূটনৈতিক সফরে রয়েছেন। সিঙ্গাপুরে আসার আগে তিনি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া সফর করেছেন। জাকার্তায় ইসরাইলবিরোধী যৌথ বিবৃতি: এর আগে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ম্যাক্রোঁ ও দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ইসরাইলের গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দেন। সেখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরাইলের অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকার করার শর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি বৈশ্বিক ধারা চালু করতে চায় ফ্রান্স। গাজার দুর্দশা ও ইসরাইলের যুদ্ধ অভিযান: এদিকে ইসরাইলের দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময়ের অবরোধের পর সামান্য পরিমাণে সহায়তা প্রবেশ করতে দিলেও গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ রয়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় প্রতি পাঁচজনের একজন মানুষের সামনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ইসরাইল বলেছে, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে তারা সামরিক অভিযান নতুন করে জোরদার করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে অব্যাহত ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় এ পর্যন্ত ৫৪,২০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।