ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম

ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার প্রবর্তন চট্টগ্রামে

ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার প্রবর্তন চট্টগ্রামে

মুক্তিযুদ্ধ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেছেন, বিশ্ব সভ্যতায় এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা। এ ব্যবসার প্রবক্তা ও প্রবর্তন চট্টগ্রাম থেকে। গতকাল শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম কলেজ আয়োজিত ৭ম ইকনোমিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৫, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ মানবিক অর্থনৈতিক দর্শন বিশ্বকে চমকিত ও আশান্বিত করেছে। সমাজতান্ত্রিক কিংবা পুঁজিবাদী বিশ্বে এ নব্য অর্থনীতির জ্ঞান ও ধারণা আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রো ইকোনোমিক্স, সামাজিক ব্যবসা এবং সমস্যার সমাধানভিত্তিক ব্যবসার ধারণাগুলোর জন্মও হয়েছে চট্টগ্রামের মাটি থেকে। এখানেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার সূচনা, যা পরবর্তীতে মাইক্রোক্রেডিট নামে বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করে। এখান থেকেই নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি বিশ্বজয় করে। আজকের দুনিয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান ভিত্তিক উদ্যোগ ও ধারণা চট্টগ্রাম থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেখানে জামানত, সম্পদ ও প্রতিশ্রুতি মুখ্য, সেখানে ট্রাস্ট-বেইজড ব্যাংকিং মানুষের বিশ্বাসকে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি বলেন, এ অনন্য ধারণাটিও চট্টগ্রাম থেকেই উৎসাহিত হয়েছে এবং এটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নৈতিক অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এ নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তত্ত্ব ও প্রয়োগই বাংলাদেশকে প্রথম নোবেল জয়ের গৌরব এনে দিয়েছে। আমাদের গ্রামীণ ব্যাংক ও এর উদ্ভাবক প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যবসা জগতেও আমরা অভিনব বিকল্প দিয়েছি। ব্যক্তিগত মুনাফা-কেন্দ্রিক ব্যবসার সমান্তরালে সমাজ কল্যাণভিত্তিক সামাজিক ব্যবসার দর্শন এক অনন্য মানবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যা সারা বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক সাম্য ও মানবিকতা বিকাশে এ পদ্ধতি প্রতিটি মানুষের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে। ফারুক ই আজম বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এসব তাত্ত্বিক ও উদ্ভাবনী ধারণার ব্রান্ডিং হওয়া উচিত চট্টগ্রাম থেকেই। ভবিষ্যতের তরুণ অর্থনীতিবিদেরা এসব ধারণার ধারক হয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে নতুন অর্থনীতির ব্যবস্থা ও জ্ঞান ছড়িয়ে দেবেন। তিনি বলেন, একটি শহরের ইতিহাস, অবদান ও আত্মার সঙ্গে যখন আধুনিক চিন্তার সমন্বয় ঘটে, তখন তা শুধু আঞ্চলিক নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচয় রূপ নেয়। তিনি বলেন, এ অলিম্পিয়াড আমাদের তরুণদের শুধু মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্র নয়, বরং অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, নীতিনির্ধারণ, বাজেট বিশ্লেষণ এবং টেকসই উন্নয়নের জ্ঞান অর্জনের এক উৎকর্ষ মঞ্চ। আজকের শিক্ষার্থীরা যেন শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তব জগতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হয়, এ আমাদের প্রত্যাশা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বাংলাদেশ ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াডের চেয়ারম্যান ড . হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বক্তৃতা করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত