ইরানের ঐতিহাসিক বিজয়ের পর আগ্রাসী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে নতুন করে স্বীকৃতি না দিতে ও কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কে না জড়াতে আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। দলটি বলছে, ইসরাইল বিরোধী বিজয়ের পর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আশু কর্তব্য হলো ফিলিস্তিন, আরাকান ও কাশ্মীরের মুসলমানদের মুক্তির জন্য সম্মিলিত লড়াই গড়ে তোলা। গতকাল শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আহ্বান জানানো হয়।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, বিপ্লবী
ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান, মাদ্রাসা-ই আলিয়া শাখার আহ্বায়ক রাকিব মন্ডল ও সদস্য সচিব মো. জিনাত হোসেন। সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন বৈষম্যবিরাধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র আবদুল হামিদ আস সাফওয়ান।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, সদস্য বায়েজিদ বোস্তামি ও তোফায়েল হোসেন, আহত জুলাই যোদ্ধা মো. শফিকুর রহমান, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া শাখার সহকারী সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল সোহাগ প্রমুখ।
মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, ইসরাইল বিনা উসকানিতে ও মিথ্যা অজুহাতে ইরান ও গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে যুদ্ধাপরাধ করেছে। জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র শুধু যুদ্ধেই নয় নৈতিকভাবেও পরাজিত হয়েছে।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের এই নেতা গাজা গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আহবান জানান।
সাইয়েদ কুতুব বলেন, শান্তিময় পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করছে এবং জাতিসংঘের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইরান, ইয়েমেন ও লেবাননের ওপর অবৈধভাবে হামলা করেছে। তবে ইরানের পাল্টা হামলায় সন্ত্রাসী অবৈধ রাষ্ট্র উলটা ধরাশয়ী হয়ে যায়।
তিনি বলেন, অবৈধ ইসরাইলকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র বেআইনিভাবে ইরানের ওপর হামলা করে। তবে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় ঘাঁটিগুলোতে হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র ভয়ে তড়িঘড়ি করে ইসরাইল ও ইরানের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে। এতে ইরানের বিজয় হয়েছে। তবে আমরা মনে করি ইরানের উচিত ছিল গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্য প্রত্যাহার ও ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা বন্ধের শর্তে যুদ্ধবিরতি কর্যকর করা। আমরা চাই অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা করা হবে।
আবদুল ওয়াহেদ বলেন, বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার দাবিতে আমরা প্রতি বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আয়োজন করে আসছি। এই প্রতিবাদ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিন, আরাকান ও কাশ্মীরে চলমান নিপীড়ন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আমরা চাই, একটি ‘মুসলিম ইউনিয়ন’ গঠনের মাধ্যমে নির্যাতিত মুসলিম অঞ্চলগুলোর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
জিহাদী ইহসান বলেন, ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী, কাশ্মীরে দখলদার ভারতীয় সেনা এবং আরাকানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দ্বারা পরিচালিত অব্যাহত দমন-পীড়ন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ শুধু একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয় বরং এটি ঈমানি দায়িত্ব। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, মিডিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান নাগরিককে আহ্বান জানাই এই নির্যাতিত জনগোষ্ঠীগুলোর পক্ষে দাঁড়ান, তাদের জন্য আওয়াজ তুলুন। প্রতি জুমার নামাজে ফিলিস্তিনের পক্ষে খুতবা পাঠ করুন।