চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে ৪৪২ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৩ জন এবং ধর্ষণচেষ্টার শিকার ৭০ জন। যার মধ্যে ১৮ জন কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, দুজন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম। লিখিত বক্তব্যে রাবেয়া বেগম শান্তি বলেন, বর্তমানে নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা নারীর স্বাধীন চলাফেরাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। যেখানে সেখানে নারীর পোশাক, নারীর সাজসজ্জা, নারীর চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে নানাভাবে শারীরিক ও মৌখিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। ১৮ বছরের নিচে কন্যা শিশুদের ওপর অন্যদিকে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাসের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি (আবরার ফাহাদ হত্যা) পালিয়ে যাচ্ছেন, শিশু ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন (দিনাজপুরের ঘটনা)। সারাদেশে ছিনতাইসহ অপহরণ, খুন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে নারীসহ সব মানুষ নিরাপত্তাহীন ও বিপন্ন বোধ করছে।
এই নারীনেত্রী বলেন, সাম্প্রতিক নারী বিদ্বেষী অপসংস্কৃতির প্রভাব এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিও পরিলক্ষিত হয়। যেমন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে কালি লেপন, রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন। আমরা মনে করি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজের অচলায়তন ভেঙে নারীদের আলোর পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি সমাজের অবরোধ ভাঙার জন্য, নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য, নারীর মুক্তির জন্য আজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন তারই ফলশ্রুতিতে আজ লাখ লাখ নারী শিক্ষা, খেলাধুলা, জ্ঞান চর্চাসহ বিভিন্ন পেশায় এসে সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখতে পারছে। তাকে অবমাননা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ও বিদ্বেষ ছাড়ানোর মাধ্যমে নারী সমাজের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে নারী সমাজকে গৃহকোণে ঠেলে দেওয়ার বার্তা ছাড়ানোর যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশের নারী সমাজ তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।