ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জে উদ্বোধন হলো দেশের প্রথম ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’

নারায়ণগঞ্জে উদ্বোধন হলো দেশের প্রথম ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’

নারায়ণগঞ্জে ২১ জন শহিদের নামে নির্মিত হয়েছে প্রথম ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’। গতকাল সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। তারা হলেন- আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘জুলাই মাসের আন্দোলনে গত সাড়ে ১৫ বছরের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থার উৎখাত হয়েছে। বাংলাদেশকে বিতাড়িত করেছে। এ নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ৫৬ জন শহিদ হয়েছে এবং সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। আমরা শ্রদ্ধাভরে নারায়ণগঞ্জবাসীর অবদানের কথা স্মরণ করি।’

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটনা ঘটছে। ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটছে। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। জুলাইয়ে আপনারা যে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করেছিলেন। ঐক্যবদ্ধ থাকলে চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজ আছে লুটেরা আছে তাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’

উপস্থিত সবার উদ্দেশ্য আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের দৃঢ়কণ্ঠে জানাতে চাই বিচার পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। কোনোরকম গাফলতি থাকবে না। যে গতিতে বিচার এগিয়ে চলেছে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ সরকারের শাসনামলেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।’ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণভবনকে একটা ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাদুঘর গড়ে তুলার জন্য কাজ করছে। ৫ আগস্টের আগেই এটার উদ্বোধন করা হবে। এটা স্বৈরাচারের ঠিকানা। আমরা এই ঠিকানাকে সংরক্ষণ করতে চাই দেখাতে চাই। এখানে ফ্যাসিবাদ কিভাবে মানুষকে অত্যাচার করতো। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি শহিদদের সমস্ত কবরগুলো সংরক্ষণ করার জন্য। আমরা কাজগুলো শেষ করতে চাই। তবে সংগ্রামের ধারা শেষ করতে পারব এটা আপনাদের কাছে দিয়ে যাবো। আপনারা অগ্নিযুগের সন্তান আগুন হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বাংলাদেশে যেন কখনও কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি চোখ রাঙাতে না পারে। ফ্যাসিবাদ না আসতে পারে। আসার চেষ্টাও করা হয় সেটাকে দমন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের সংগ্রাম চালিয়েছিল। এই সংগ্রামে বহু মানুষ গুম হয়ে যায়। বিচার বহির্ভূত নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। অনেক আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছিল। এই সংগ্রামের এক পর্যায়ের বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ছাত্ররা বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে এবং অগ্নিকন্যারাও নেমে এসেছিলেন রাজপথে।’

বক্তব্যে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী, ছাত্রজনতা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, বৈষম্যমুক্ত করেছে। তাদের ত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত দেশ পেয়েছি। এই জুলাইকে স্মরণ করে আজ আমরা সবাই আজ একত্রিত হয়েছি। জুলাইকে আমাদের সবসময় স্মরণ করতে হবে। এই নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহিদ হয়েছেন। বুলেটের সামনে সেদিন তারা বুক পেতে দিয়েছিল। আর এই ৫৬ শহিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সন্তান ছিল ২১ জন। তাদের স্মরণে এবং তাদের পরিবার যে এতো বড় আত্মত্যাগ করেছে তা স্মরণে আজ নারায়ণগঞ্জে শহিদ স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণ করা হয়েছে। তারা এক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জীবন দিয়েছিল। আর ওই উদ্দেশ্য হলো বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তাদের শ্রদ্ধা করার একটি উপায় হচ্ছে দোষীদের বিচার কাজ নিশ্চিত করা।

আর যেনো বাংলাদেশের সরকার, বাংলাদেশের কোনো বাহিনী নিজ দেশের মানুষের উপর গুলি চালাতে না পারে। আমরা এই বিচার প্রক্রিয়া সামনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা শুধু নিহত করার বিচারই নয় মানুষকে অন্ধ করার, পঙ্গু করার বিচারও করব। মোটকথা যারা যৌক্তিক আন্দোলনে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ করেছে সে বিচার আমরা সম্পন্ন করব।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল তা হলো দেশকে বৈষম্যমুক্ত করা। আর এটি করার একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। শুধু একটি উপায়েই দেশকে গণতন্ত্রমুক্ত করা যাবে না। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগেও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিল। জুলাইতে যদি ছাত্রজনতা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে না দিতো, নির্ভীক না হতো তাহলে ৫ আগস্ট ঘটতো না। আর আমরাও এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না।’

এদিকে, স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে উল্লেখ করা ২১ জন শহিদ হলেন, রিয়া গোপ, মো. রোমান, আরমান মোল্লা, মো. ইরফান ভূঁইয়া, মো. তুহিন, মো. মোহসীন, মো. জনি, ইব্রাহিম, মো. স্বজন, মো. আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলেমান, ইমরান হাসান, হযরত বিল্লাল, সফিকুল, মো. সজল, মো. মাবরুর হুসাইন, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান, মোহাম্মদ সাইফুল হাসান, আহসান কবির। অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহিদদের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত