ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইচ্ছাকৃত খেলাপি নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো

ইচ্ছাকৃত খেলাপি নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো

দেশে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। এ সব খেলাপি ঋণের অধিকাংশই ইচ্ছাকৃত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাংক খাতের ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়া গ্রাহকদের নাম প্রকাশে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ কারণে সরকার পরিবর্তনের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া অন্যরা ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নাম প্রকাশ করতে পারেনি। ব্যাংকাররা বলছেন, সরকার পতনের আগে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদেরও ভালো গ্রাহক দেখিয়েছে ব্যাংকগুলো। এখন এই প্রতিষ্ঠানকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি দেখালে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য এই কার্যক্রমে ধীর গতি হতে পারে। জানা যায়, বহু টানাপোড়েন ও গড়িমসির পর ২০২৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী এনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আইনটির খসড়া প্রণয়ন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

কিন্তু কাজটি চার বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখার কারণেই গড়িমসির বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ কথা স্পষ্ট যে বিশেষ সুবিধাভোগী মহল এই আইন চালুর বিপক্ষে ছিল। কিন্তু দেশের ব্যাংক খাতের ভয়াবহ অবস্থা আর অর্থনীতিবিদ ও অন্যান্য মহল থেকে চাপের মুখে সরকার আইন সংশোধন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করতে এপ্রিলের প্রথমভাগেই আলাদা ইউনিট গঠনের নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এমন খেলাপিদের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হবে সেগুলো ঠিক করে দিয়েছে সংস্থাটি। সে হিসেবে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণ, ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা, বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিধান রাখা হয়। কিন্তু ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করছি। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কারণে কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠান আগে সচল ছিল প্রতিষ্ঠান প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা পালিয়ে যাওয়ায় সেগুলোও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি কিনা তা খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। অন্য একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সরকার পরিবর্তনের আগে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি দেখানো যায়নি। কিন্তু এখন সেসব প্রতিষ্ঠান মন্দমানে খেলাপি হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করার বিষয়ে কাজ চলমান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর আমরা কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করেছি। কয়েকটি ব্যাংকের সংস্কারে এখনও কাজ চলছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি নির্ধারণে সময় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আগে যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভালো হিসেবে দেখাতো তারাই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। এখন তারা ওই ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঘোষণা করলে ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে। এ জন্য অনেকেই ব্যাখ্যা রেডি করতেও দেরি করতে পারেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সাদ মুসা গ্রুপ ও অন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, এফএমসি ডকইয়ার্ড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস মাল্টি ট্রেড কর্পোরেশন এবং ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেটকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এ সব প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত