দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুই দেশের মধ্যকার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) দ্রুততার সঙ্গে স্বাক্ষরের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। গতকাল শ্রীলংকা সফররত ডিসিসিআইয়ের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সিলন চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি সভাপতি এসব কথা বলেন। ‘হিল্টন কলম্বো রেসিডেন্স’ হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় শ্রীলংকার শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সুনীল হন্দুন্নেত্তি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সার্কভুক্ত দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্বেও এখনো তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তবে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের লজিস্টিক অবকাঠামো, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে শ্রীলংকার উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, তৈরি পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্স, পাটজাত পণ্য আমদানির জন্য শ্রীলংকার উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে শ্রীলংকার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়তা বাংলাদেশের এ খাতে দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে সিলন চেম্বারের চেয়ারম্যান ডুমিন্ডা হুলানগামুয়া বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সার্কভুক্ত দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রকৃত সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় না। তবুও এখনই সময় এসেছে পারষ্পারিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে অত্যন্ত ব্যবসাবান্ধব ও সহনশীল হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে পর্যটন এবং লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীলংকার শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সুনীল হন্দুন্নেত্তি বলেন, শুধু বাণিজ্যিক সুবিধা নয়, আঞ্চলিক অগ্রগতির স্বার্থ অর্জনের জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য টেক্সটাইল, ওষুধ, জাহাজ নির্মাণ এবং ডিজিটাল পরিষেবা প্রভৃতি খাত অত্যন্ত সম্ভবানাময়। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী শ্রীলংকার উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পাশাপাশি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের শ্রীংলকায় বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানে সেদেশের সরকার বদ্ধ পরিকর বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে শ্রীলংকার সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে বলে তিনি জানান। মন্ত্রী আরো বলেন, শ্রীলংকায় বাণিজ্য কাঠামোর সহজীকরণ, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা হ্রাসে দেশটি একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়া তিনি দুই দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যকার কার্যকর সংযোগ স্থাপনের উপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।এছাড়া অনুষ্ঠানে শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকা হাইকমিশনার ধর্মপাল বীরাক্কোদি এবং শ্রীলংকাণ্ডবাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি ড. আসাঙ্কা রত্নায়েক বক্তব্য দেন। হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশের মত শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত উদ্যমী এবং তারা শ্রীলংকার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করে দুই দেশের অর্থনীতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, তরুণ দক্ষ মানবসম্পদ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরদের জন্য অপার সম্ভবানার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন। সেইসঙ্গে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, তথ্য-প্রযুক্তি, আর্থিক খাত, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় দুই দেশের সমন্বিত বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠান চলাকালে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ৯০টি শ্রীলংকান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মধ্যকার ২০০টি বিটুবি ম্যাচণ্ডমেকিং অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দুই দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারকরণের লক্ষ্যে ডিসিসিআই এবং সিলন চেম্বারের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং সিলন চেম্বারের চেয়ারম্যান ডুমিন্ডা হুলানগামুয়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদণ্ডএর নেতৃত্বে বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি শ্রীলংকার পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী অরুন হেমাচন্দ্রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।