হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদে তিনি নামাজ পড়তেন এবং সাহাবিদের ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাকে মসজিদে নববির পাশে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে দাফন করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাফন কোথায় হবে এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। কেউ বলেন, মসজিদে নববির মিম্বরের কাছে দাফন করা হোক, কেউ বলেন, জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হোক। পরিশেষে, আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, নবীরা যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, তাকে সেখানেই দাফন করা হয়। (অন্য কোথাও দাফন করা হয় না)। এ মীমাংসার পর রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-এর ঘরের যে বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেখানেই দাফনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আবু তালহা (রা.) নবীজির দেহ মোবারক উঠিয়ে একপাশে রাখলেন। তারপর সে স্থানে কবর খনন করা হলো। (আর রাহিকুল মাখতুম : ৮৪০)। রাসুল (সা.)-এর কবরকে রওজা মোবারক বলা হয়। হজ ও উমরার সফরে মুসলমানরা মদিনায় মসজিদে নববির পাশে অবস্থিত রওজা শরিফে গিয়ে জিয়ারত করেন। রাসুল (সা.)-এর হাদিসেও তাঁর রওজা জিয়ারতের কথা বর্ণিত হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার মৃত্যুর পর আমার (রওজা) জিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।’ (দারাকুতনি : ২৬৯৪)। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেল। (মুসলিম)। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে হজ করল; কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ (তিরমিজি)। রাসুল (সা.) এর রওজা জিয়ারতের বেশ কিছু আদব রয়েছে। এখানে আদবগুলো তুলে ধরা হলো- রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের আগে মন থেকে সব জাগতিক চিন্তা দূর করত হবে। রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের আগে এবং জিয়ারতের সময় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করতে হবে। তিনি ইসলামের জন্য এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য যেসব কষ্ট সহ্য করেছেন তা স্মরণ করুন। রওজা জিয়ারতের সময় রাসুল (সা.)-এর প্রতি অন্তরে পূর্ণ ভালোবাসা রাখতে হবে। রাসুল (সা.)-কে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভালোবাসাই একজন মুসলামনের জন্য প্রকৃত মুমিন হওয়ার একমাত্র উপায়। জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকেই বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করতে হবে। রওজা জিয়ারতে বের হওয়ার আগ অবশ্যই শরীর পবিত্র করতে হবে এবং পবিত্র কাপড় পরিধান করতে হবে। রওজার আশপাশে এমন কোনো আচরণ প্রকাশ করা যাবে না, যা নবী (সা.)-এর মর্যাদা পরিপন্থি। নবী (সা.)-কে অনুচ্চ আওয়াজে সালাম দিতে হবে। কোনোভাবেই আওয়াজ উঁচু করবে না। রওজার দিকে ফিরে দাঁড়াতে হবে, তবে সামান্য দূরত্ব বজায় রাখবে। যে কক্ষে নবী (সা.) শুয়ে আছেন, সেটি এবং তার মিম্বর ইত্যাদি স্পর্শ করা, তাতে চুমু খাওয়া ও তাওয়াফ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহর কাছে যেভাবে কোনো কিছু চাওয়া হয়, সেভাবে নবী (সা.)-এর কাছে চাওয়া যাবে না। কোনো চাওয়ার থাকলে মহান আল্লাহর কাছেই চাইতে।