সাবিনাদের বিদ্রোহ অবসানের বিষয়ে বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারপারসন মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেছেন, ‘সভাপতি ও আমার পক্ষ থেকে মেয়েদের বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করেছি। তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা ছিল। সে ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার ওই ১৮ ফুটবলারের সাথে বসেছিলাম। কথা বলেছি। এখন আমি আপনাদের বলতে পারি যে, মেয়েরা অনুশীলনে ফিরবে।’ কবে নাগাদ ফিরবে? জবাবে কিরণ বলেন, ‘আজ-কালই তারা অনুশীলনে ফিরবে না। আমাদের ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। দল আরব আমিরাত যাবে ওই দিন ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে। ওইদিন থেকে সবার জন্য ক্যাম্প বন্ধ। সিনিয়র মেয়েরাও চাচ্ছে একটা ব্রেক নিতে, মানে বিশ্রাম নিতে। তাই ওরাও ছুটিতে চলে যাবে।
আরব আমিরাত থেকে দল দেশে ফিরলে তারাও ছুটিতে যাবে। তারপর আমরা সবাইকে একসঙ্গে ক্যাম্পে ডাকবো। ওরা ফিরলে আমরা উইমেন্স উইং মেয়েদের নিয়ে সভাপতি, সহ-সভতি যারা আছেন এবং কোচদের নিয়ে বসবো। বিষয়টি নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল সেটা মিটিয়ে দেয়া হবে। কারণ, কেউ কারও ওপর অসন্তুষ্ট থাকলে ভালো কিছু হবে না। অচলাবস্থা কেটে যাচ্ছে- কিরণের এই ঘোষণা দেওয়ার সময় অবশ্য কোনো ফুটবলার সাথে ছিলেন না। ১৮ জন ফুটবলারই নাকি কিরণকে বলে গেছেন, তারা ফিরবেন সেই কথা গণমাধ্যমে বলে দিতে। ‘সব মেয়েই আমাকে বলে গেছে তারা ফিরবে এবং চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবে। এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা ইতিবাচক খবর। মেয়েরা তাদের জায়গা থেকে সরে আসছে। তারা ভুল বুঝতে পেরেছে’- বলেন কিরণ। সাবিনাদের মতো কোচ পিটার বাটলারও বিদ্রোহ করেছিলেন সিনিয়র ৭ ফুটবলারের বিষয়ে। তিনি নাম উল্লেখ করে বাফুফেকে বলেছিলেন, ওই ফুটবলাররা থাকলে তিনি থাকবেন না। কোনো সমঝোতাও করবেন না। তাহলে এখন কোচের কি ভূমিকা থাকবে?
জবাবে কিরণ বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে এখনো কোচের সাথে কথা বলিনি। তাই এ নিয়ে এখন কিছু বলছি না। ছুটি শেষে সবাই যখন আসবে তখন বসে এ বিষয়গুলো ফয়সালা করা হবে।’ আপাতত দৃষ্টিতে ঝামেলা মিটে গেলেও এর রেশ ভেতরে ভেতরে থেকে যাবে কিনা এবং আগামীতে আবার শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো কিছু ঘটবে কিনা সেই দিক বিবেচনা করে মেয়েদেরকে কোনো কাউন্সিলিং করা হবে কিনা? বিষয়টি পরিস্কার করেছেন কিরণ এভাবে, ‘উইমেন্স উইংয়ের পক্ষ থেকে সব সময়ই কাউন্সিলিং থাকে। ১৬ বছর ধরে মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি। কখনো তো শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো ঘটনা ঘটেনি। নারী ফুটবলের এই যে সাফল্য এর পেছনে শৃঙ্খলা ছিল সবচেয়ে বড় জিনিস। এ ঘটনাকে আমরা বলব দুর্ঘটনা। এটাকে আমি শৃঙ্খলাভঙ্গ বলবো না। ওরা খুব যে বড় তা না। ওরা তো বাচ্চা। সব কিছু বোঝেও না। অনেক সময় ইমোশনাল হয়ে অনেক কিছু করে, সেটাই হয়েছে। বিষয়টাকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে না দেখাই ভালো।’ কোচের সাথে সিনিয়র কয়েকজন ফুটবলারের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময়ই। তাহলে কোচকে পূণরায় নিয়োগ দেওয়া হলো কেন, সে বিষয়ে কি বলবেন? ‘কোচ ও মেয়েদের মধ্যে যখন সমস্যা তৈরি হলো তখন থেকেই নারী উইং তাদের নিয়ে কাজ করেছে। তাদের বিভিন্নভাবে বোঝানো হয়েছে। কখনো সবাইকে একসঙ্গে করে, কখনো একজন একজন করে। একদিন দুই দিন না, অনেক দিন তাদের সাথে বসেছি। আলোচনা করেছি। তারপর আমি বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, মেয়েদের সাথে কোচের কি সমস্যা। এই কোচ নিয়োগ দেওয়া যাতে না হয় সেটাও তাদের বলেছি।
কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে জরুরি কমিটির মাধ্যমে। যে কমিটিতে আছেন বাফুফে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চারজন সহ-সভাপতি। তারা মনে করেছেন যে, বাটলার ভালো কোচ, দলের জন্য একজন ভালো কোচ দরকার। তাই তারা নিয়োগ দিয়েছেন’- বলেছেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। নারী উইংয়ের ইচ্ছা না থাকার পরও বাফুফের জরুরি কমিটি পিটার বাটলারকে নিয়োগ দিয়েছে। সেটা কি তাহলে জরুরি কমিটিরই ভুল ছিল? নাকি কোনো গ্যাপ ছিল? কিরণ বলেন, ‘কারো ভুল সেটা বলবো না। গ্যাপও বলবো না। তারা মনে করেছেন যে, বাটলার ভালো কোচ। তাকে নিয়োগ দিলে মেয়েরা এখন হয়তো রাজি হচ্ছে না। পরে রাজি হতে পারে। তারা ভালোর জন্যই করেছেন।
তবে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটা হয়তো ভাবেননি। এখানে কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। পিটার বাটলার ভালো কোচণ্ড সে দিকটা বিবেচনা করেই তারা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমার দিক থেকে যা যা তথ্য দেওয়ার, শীর্ষ কর্মকর্তাদের দিয়েছি। কারণ, আমি আমার জায়গা থেকে সব সময় স্বচ্ছতার সাথে কাজ করি। করে আসছি, করছি এবং ভবিষ্যতেও করব।’