আরো একটি আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। আরো একবার ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হচ্ছে দুই দলের। গত আসরের সেমিফাইনালে প্রতিবেশী দেশটির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিজেদের মিশন শুরু করবে টাইগাররা। তার আগে গতকাল বুধবার দুবাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। তিনি বলেন, ‘এই সংস্করণে আমাদের দলটা ব্যালান্সড। আমরা বিশ্বাস করি, এই টুর্নামেন্টে আমরা যে কোনো দলকে হারাতে পারি। সব দলই শিরোপা জয়ের সামর্থ্য রাখে। আর আমি এমন কেউ নই যে প্রতিপক্ষ নিয়ে খুব বেশি ভাবি। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা যে কোনো দিন যে কোনো দলকে হারাতে পারি।’
ভারতের বিপক্ষে ২০২২ সালের সিরিজ জয়ের কথা টেনেছেন শান্ত। যদিও পরক্ষণে জানালেন সেটা অতীত। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কথাতেই জোর দিচ্ছেন টাইগার অধিনায়ক। ‘আপনি যদি খেয়াল করেন তাহলে ৮টি দলই ভালো মানের। ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভালো স্মৃতি আছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু ম্যাচও জিতেছি। গত বছর (আসলে ২০২২) ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ভালো স্মৃতি আছে। কিন্তু সেটা এখন অতীত। আগামীকাল যদি ভালো খেলতে পারি আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে ভালো একটা ম্যাচ হবে।’
এসময় বাংলাদেশের অধিনায়ককে প্রশ্নবাণ জর্জরিত করেন ভারতীয় সাংবাদিকরা। তারা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে চুপ রইলেন শান্ত। প্রশ্নকর্তা হয়তো আরেকটু বড় জবাব কিংবা আরো কিছু শোনার আশা করছিলেন। কিন্তু শান্তর সেদিকে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ দেখা গেল না। স্রেফ দুটি শব্দ আর নির্লিপ্ত শরীরী ভাষায় বাংলাদেশ অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন, সাকিব আল হাসানকে নিয়ে প্রশ্নে খুব একটা আগ্রহী নন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে দেশ ছাড়ার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও সাকিবকে নিয়ে প্রশ্নে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন শান্ত। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় এক সংবাদকর্মী বাংলায় জানতে চাইলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো একটা টুর্নামেন্টে সাকিবের না থাকাটা কি চিন্তার কারণ?’ উত্তর দিতে একটুও সময় নিলেন না শান্ত, ‘জ্বী না।’ ব্যস, ওটুকুতেই শেষ!
দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে নিয়ে প্রশ্নে অবশ্য বড় উত্তর দিয়েই বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন শান্ত। ‘আসলে এই প্রশ্নটা কেন করলেন আপনি, জানি না আমি। আমরা সবাই জানি, এই প্রশ্নের উত্তর অনেক ক্রিকেটার দিয়েছে যে, ‘অবশ্যই আমরা সাকিব ভাইকে মিস করব, থাকলে ভালো হতো।’ আপনারা এই প্রশ্ন, এই উত্তর অনেকবার পেয়েছেন আপনারা। আমার মনে হয় না, এত বড় একটি টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে আবার এই প্রসঙ্গে কথা বলাটা যৌক্তিক হবে।’ সাকিবের মতো ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডারের উপযুক্ত বিকল্প পাওয়া কঠিন। তবে গত কিছুদিনে ব্যাটে-বলে তেমন কিছু হয়ে ওঠারই নির্ভরতা জোগাতে শুরু করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলে আছেন আরেক স্পিনিং অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেন। কার্যকর লেগ স্পিনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ঝলক তিনি দেখিয়েছেন এর মধ্যেই। কিছুদিন আগে বিপিএল ফাইনালেও তার ক্যামিও ইনিংস বড় ভূমিকা রাখে ফরচুন বরিশালের শিরোপা জয়ে। মাহমুদউল্লাহকে আগের মতো অলরাউন্ডার এখন আর বলা না গেলেও প্রয়োজনে তিনি হাত ঘোরাতে পারেন। সৌম্য সরকার তো আছেনই। তানজিম হাসান ও নাসুম আহমেদের ব্যাটের হাতও খারাপ নয়।
শান্তর আশা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন পারবেন অলরাউন্ডাররা। ‘অলরাউন্ডাররা সবসময় দলকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে। আমাদের ভালো কিছু অলরাউন্ডার আছে। আশা করি, তারা আগামীকাল পারফর্ম করবে এবং দলের জন্য নিজেদের মেলে ধরবে।’ বাংলাদেশের স্কোয়াডে যেমন নেই দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব, ভারতীয় দল তেমনি পাচ্ছে না সময়ে সেরা বোলার জাসপ্রিত বুমরাহকে। এমন ক্ষুরধার একজন বোলারকে খেলতে না হওয়ায়টা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় স্বস্তিরই হওয়ার কথা। তবে শান্তর দাবি, তারা বুমরাহর না থাকা নিয়ে এতটা ভাবিত নন। ‘কোনো একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে ভাবছি না আমি। ওদের মানসম্পন্ন ক্রিকেটার আরো অনেক আছে। আমরা ভাবছি কীভাবে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি।’