অভিনেত্রীদের সাহসী হওয়া এই সমাজে কত সোজা! কাপড় যে যত বেশি খুলতে পারে, পোশাক যার শরীরে যত কম, সে তত সাহসী অভিনেত্রী! পুরুষকে কামবাসনায় জাগিয়ে তোলার ক্ষমতাই এখন সাহসিকতার প্রতীক! সমাজের এই নষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির শেষ গন্তব্য কোথায়? প্রজন্মকে কোনদিকে টেনে নিচ্ছে কথিত এই সাহসিকতা?
পুরুষের সাহস প্রমাণে যুদ্ধ করতে হয়। সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়তে হয়। জীবন হাতে নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পরিবারের ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হয়। জীবনবাজি রেখে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। ক্ষমতার বিরুদ্ধে বুকে বারুদ নিয়ে বুলেটের সামনে দাঁড়াতে হয়। তারপরে কেউ কেউ প্রমাণ করতে পারে কিংবা স্বীকৃতি পায় সাহসের কিছুটা! কেউ কেউ তো সাহস প্রমাণ করতে গিয়ে মারাই যায়।
নারীর পোশাক সংক্ষিপ্ত হয়ে যত উরুর দিকে, যত গলার দিকে ওঠে সে তত সাহসী। সন্দেহ নেই, নারীকে এই সাহসের খেতাব পুরুষেই দিচ্ছে। যে পুরুষ স্বল্প বাসনার নারীকে সাহসী মেয়ে বলছে, সেই আবার এই সাহস তার স্ত্রী, বোন কিংবা কন্যাকে প্রদর্শন করতে দেবে না। যারা নারীকে পণ্য হিসেবে দেখতে চায়, সমাজে সূচনা করতে চায় বন্য খেলা তারা সমাজ-সংস্কৃতির মূল্যবোধ, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং স্বাভাবিক রুচিকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চায়। এখানে শুধু তাদের জৈবিক অসুস্থতা থাকে না বরং সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও থাকে। সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর এই কথিত সাহসীদের প্রতিহত করা না গেলে পারিবারিক পরিমণ্ডলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এই সমাজে অসুস্থতা সবচেয়ে বেশি সংক্রামক।
সমাজে আবর্জনা বাড়ছে। ফ্যাশন সচেতনতার নামে অশ্লীলতার হুজুগ শুরু হয়েছে। অভিনয়ের দক্ষতা নাই, বাচিকতায় সৌন্দর্য নেই অথচ পোশাকের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সংক্ষিপ্ত করে কেউ কেউ নাটক-সিনেমার সেরা অভিনেত্রী সেজেছেন! তারা কোনো অভিনয় না করলেও একদল দর্শক হাততালি দেয়, অপার হয়ে চেয়ে থাকে! অভিনয় দেখার চেয়ে, কিছু শেখার চেয়ে যারা রঙিন পর্দায় শরীর দেখে বেশি মজা পায়, তাদের কাছে সেরা অভিনেত্রী কথিত সাহসী অভিনেত্রীরাই। বাজারদরও তাদের রমরমা। একসময়ের যাত্রাপালার সেই বেলাল্লাপনা এখন নাটক সিনেমায় উপস্থাপিত হচ্ছে।
কতিপয় অভিনেত্রী ও মডেলের বিদেশে ঘুরতে যাওয়া মানে কয়েকটি ন্যাংটা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেই হবে! বসনাহীন শরীর প্রদর্শনের ছবিতেও নাকি আজকাল ভালো ইনকাম হয়! ট্রিপের কিছু টাকা উসুল হলে মন্দ কী!
এই সমাজটা আমাদের না? আমাদের পুত্র-কন্যাদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সমাজের বৃদ্ধরা ধ্বংস হলে তাতে সমাজের ক্ষতি সামান্যই; কিন্তু তরুণ প্রজন্ম যদি বিগড়ে, বখাটে হয়ে যায় তবে সে ক্ষত আর সারিয়ে তোলা যাবে না। অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে অনিষ্টকারীদের বয়কট করতে হবে। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার শুরু হবে। নারী প্রগতিবিরোধী, পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ কিংবা ধর্মান্ধতাণ্ড এসবের কিছুতেই দমে যাওয়া যাবে না।
কোথাও যদি ময়লার ডাস্টবিন ঢাকনাহীন থাকে, সেটার দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত করে। আশপাশের মানুষ সেটা এড়িয়ে থাকতে চাইলেও একসময় হার মানতে হয়। কেননা, দুর্গন্ধের কাছে মানুষের যাওয়া লাগে না বরং মানুষের নাকের সামনে দুর্গন্ধ চলে আসে। এইসব কথিত সাহসীরা ব্যাংকক কিংবা থ্যাইল্যান্ডে বসে পোশাক খুললেও সেটা বাংলাদেশের পরিবেশকে দুষিত করে। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি অথচ একেকজনের পোশাকের কী রুচি! সবার ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে কিন্তু কারো স্বাধীনতার চর্চা যখন প্রচলিত মূল্যবোধের জন্য হুমকি তখন তা রুখে দিতে হবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক শুদ্ধতা সবার আগে অগ্রাধিকারে থাকবে। কারো অশুদ্ধ বিচরণে জমিনের পবিত্রতা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
আমাদের সেই সাহসিকতার দরকার নেই, যে সাহসিকতা সমাজ-সংসারকে কলুষিত করে। যারা এই অশ্লীলতায় মেতেছে এবং যারা এগুলোকে প্রমোট ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারা বিবেকের দায়বদ্ধতায় শুধরে গেলে ভালো, নয়তো শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আইনের দ্বারা এগুলোর বিচরণ ও বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। বিদেশিদের অপসংস্কৃতির চিত্রভিডিওর চেয়েও দেশিদের এই অশ্লীলতার উদযাপন প্রজন্মের জন্য অধিক ক্ষতির কারণ।