চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে, বিপিএলের মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও কিছুদিন খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। সে অনুযায়ী আজ থেকে শুরু হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) খেলবেন দেশের অন্যতম সেরা এ ব্যাটার। তামিম খেলবেন মোহামেডানের হয়ে। অন্যদিকে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের অর্থায়নে সহযোগিতা করেছেন তিনি। বিকেএসপিতে আজ তামিমের অর্থায়ন করা গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষেই এবারের ডিপিএল শুরু করবে তামিম ইকবালের মোহামেডান। এবারের আসরে বড় দল গড়ে শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা করছেন তিনি। এক ক্লাবের খেলোয়াড়, আরেক ক্লাবের সংগঠক। ব্যাপারটি স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখছেন অনেকে। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে কী হবে তা নিয়ে জল্পনা দেখা দিয়েছে।
লিগ শুরুর আগের দিন গতকাল শনিবার এর ব্যাখ্যা দিলেন তামিম। স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মজা করে বলেছেন, ‘আমি যদি ওদের বিপক্ষে দ্রুত আউট হয়ে যাই তাহলে কি বলবেন ইচ্ছা করে আউট হয়েছি!’ গুলশান ক্রিকেট ক্লাব তামিমের দল এমন রটে যাওয়ায় সংবাদ মাধ্যমের কারণেই হয়েছে বলে জানান তামিম, ‘আমি দলের সঙ্গে আছি। দলটি আমার না কিন্তু, এটা আপনারা (সংবাদ মাধ্যম) করেছেন। আমি শুধু স্পন্সর এনে দিয়েছি। তাই স্বার্থের দ্বন্দ্বের কোন কারণই নেই।’ তামিম বিষয়গুলোতে জটিল বা নেতিবাচক হিসেবে না দেখার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘এই জিনিসগুলো সবসময় নেতিবাচকভাবে চিন্তা না করে এভাবে চিন্তা করেন যে, এখন যদি আমাদের মতো স্পন্সররা একটা দলকে স্পন্সর না করে তাহলে ১৫-২০ জন ক্রিকেটার দল পাবে না। এভাবেও একটু চিন্তা করেন।’ তামিম যোগ করেন, ‘সবসময় নেগেটিভ জিনিস বের করার চেয়ে একটু পজিটিভ দিকটাও চিন্তা করেন। ধরেন আমি একটা দলকে যদি স্পন্সর না করতাম তাহলে আজকে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক এমনিতেই অর্ধেক হয়ে গেছে। আমার কথা উদাহরণ দিচ্ছি, ধরেন আমার সঙ্গে যারা আছেন তারা যদি এগিয়ে না আসতেন তাহলে খেলাটা হবে না। তাই সবসময় নেতিবাচক দিক না খুঁজে একটু ইতিবাচক দিকও দেখবেন।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও আরও কিছু দিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন তামিম ইকবাল। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা অবস্থায় সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টাতে আছেন দেশসেরা এই ওপেনার। ঢাকা লিগের ক্লাব কেনার মধ্য দিয়ে সেই প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছেন। ফরচুন বরিশালের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে গুলশান ক্রিকেট ক্লাব কিনেছেন তিনি। যদিও তামিম ক্লাব কেনার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন ক্লাবের মালিক নন তিনি, কেবল গুলশান ক্লাবকে স্পন্সরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই অর্থেও তামিমকে বিনিয়োগকারী বলা যায়, গুলশান ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া তামিম নিজে খেলবেন মোহামেডান ক্লাবে।
এমন ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। বিসিবির পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় দিব্যি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কোচিং করিয়ে গেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। বেক্সিমকোর শীর্ষ পদে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সেই বেক্সিমকোর মালিকানায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা দলগুলো ঘরোয়া ক্রিকেটে পেতো অন্যায্য সব সুযোগ-সুবিধা, আম্পায়ারদের আনুকূল্য। নতুন পেক্ষাপট আসার পর ধারণা করা হচ্ছিল, নতুন কিছুর হয়তো দেখা মিলবে।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন একাধিকবার। সংবাদ সম্মেলনে নানান সময়ে তাকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে ইতিবাচক সুরই শোনা গেছে। অবসর ঘোষণার পরদিন তামিম চট্টগ্রাম বিভাগের ক্রিকেটারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। এরপর এবারই প্রথম বিভাগে উন্নীত হওয়া গুলশান ক্রিকেট ক্লাবে বিনিয়োগ করেছেন।