প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা গুলশান ক্রিকেট ক্লাব প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচেই চমক দেখিয়েছে। তারকাবিহীন তরুণদের নিয়ে গড়া দলটি অভিজ্ঞতা ও তারকায় ঠাসা মোহামেডানকে উড়িয়ে দিয়েছে। আগে ব্যাটিং করা গুলশান ২৯৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমণ্ডমাহমুদউল্লাহদের ব্যর্থতায় ১৯১ রানে অলআউট হয় মোহামেডান। তাতে করে ১০৭ রানের বড় পরাজয়ে চলতি মৌসুম শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহীরা। অথচ গুলশানের নবীন ক্লাবটির অর্থায়নে আছেন মোহামেডানের অধিনায়ক তামিম। ওই হিসেবে বলা যায় নিজের দলের কাছেই হেরেছেন তিনি! গতকাল সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গুলশানের দেয়া ২৯৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায় মোহামেডান। অষ্টম ওভারে অধিনায়ক তামিমের ফেরার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দলটির ব্যাটিং বিপর্যয়। দলে তারকা এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দিয়ে ভরা থাকলেও কোনো লাভ হয়নি। সবাই ছিলেন ব্যর্থ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর ব্যর্থতা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয়েছিল। ভেন্যু এবং টুর্নামেন্ট পাল্টে নিজেদের মাঠে সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। মুশফিক ৭ ও মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১০ রানের ইনিংস। মিডল অর্ডারে এই দুই ব্যাটারের ব্যর্থতাতেই মোহামেডানের এমন বিপর্যয়। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন আরিফুল ইসলাম। ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ৪০.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯১ রান সংগ্রহ করে তারা। গুলশানের বোলারদের মধ্যে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করা ইফতি বল হাতে কারিশমা দেখিয়েছেন। ২৬ রানে নেন তিনটি উইকেট।
এছাড়া আজিজুল হাকিম ও মোহাম্মদ ইলিয়াস নেন দুটি করে উইকেট। এর আগে টস জিতে গুলশানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় মোহামেডান। ৩৪ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নবীন দলটি। ওপেনার আজিজুল হাকিম তামিম (৪) ও খালিদ হাসান (৮) দ্রুত ফিরে যান। দলের হাল ধরেন জাওয়াদ আবরার ও ইফতেখার হোসেন ইফতি। এই দুই জনের ৮৩ রানের জুটির পর জাওয়াদ ৮৬ বলে ৭৫ রান করে বিদায় নেন। এরপর ইফতি ও হাবিবুর শায়েখ মুন্নার ৯৪ রানের জুটিতে গুলশান বড় সংগ্রহের পথটা পেয়ে যায়। মুন্না ৫৩ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। তবে বড় কৃতিত্ব ইফতির। চলতি মৌসুমের প্রথম সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাট থেকে। ১১০ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন ইফতি। শেষ দিকে মেহেদী হাসান ১৩ বলে ২০ ও নিহাদুজ্জামান ৮ বলে ১৩ রান করে দলকে ৮ উইকেটে ২৯৮ রানের পুঁজি এনে দেন। মোহামেডানের বোলারদের মধ্যে আবু হায়দার রনি ৬৬ রানে নেন চারটি উইকেট। এছাড়া সাইফউদ্দিন ও এবাদত হোসেন নেন একটি করে উইকেট।
দিনের আরেক ম্যাচে নবাগত অগ্রণী ব্যাংকের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। এদিন মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে আবাহনী করে ২৩৪ রান। জবাবে ইমরুল কায়েসের ৯৪ রানে ভর করে ৬ উইকেটের দারুণ জয় পেয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ২৩৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অগ্রণী ব্যাংকের দুই ওপেনার ইমরানুজ্জামান ও সাদমান ইসলাম ৫৮ রানের জুটি গড়েন। ইমরানুজ্জামান ৩৫ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর ইমরুলকে সঙ্গে নিয়ে সাদমান আরও ৪৬ রানের জুটি গড়েন। সাদমানের আউটের পর অমিত হাসান ও ইমরুল কায়েস মিলে গড়েন ১২৫ রানের মূল জুটি। সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতে ইমরুল আউট হলে ভাঙে জুটি। ফেরার আগে ইমরুল ৯৪ বলে ৩ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেছেন ৯৪ রানের ইনিংস। তখন জয় থেকেও ৬ রান দূরে তারা। জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটারের আউটের পর অমিত হাসানও বিদায় নেন ৪৪ রানে। যদিও তাদের বিদায়ে সমস্যা হয়নি। ৪৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে অগ্রণী ব্যাংক।
আবাহনীর বোলারদের মধ্যে মাহফিজুর রাব্বি সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া মোসাদ্দেক-মৃত্যুঞ্জয় নেন একটি করে উইকেট। শুরুতে অগ্রণী ব্যাংক টস জিতে আবাহনীকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রথম ওভারেই শাহরিয়ার কমলকে (০) হারায় ঐতিহ্যবাহীরা। এরপর পারভেজ হোসেন ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে ৫৫ রানের জুটি গড়েন। নাঈম হাসানের বলে এলবিডাব্লিউর শিকার হন জাতীয় দলের অধিনায়ক শান্ত। এই আউট মেনে নিতে না পেরে ব্যাট ছুঁড়ে মেরেছিলেন তিনি। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৫১ বলে ২০ রানের ইনিংস। তার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আবাহনী। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দৃঢ়তায় ৫০ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে তারা ২৩৪ রান জমা করেছে। মোসাদ্দেক ৬৫ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। এর আগে পারভেজ খেলেছেন ৭৪ বলে ৫০ রানের ইনিংস। অগ্রণী ব্যাংকের বোলারদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ৪৪ রানে নেন চারটি উইকেট। এছাড়া রুয়েল মিয়া ও শুভাগত হোম প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন। রবিউল হক ও নাঈম হাসান নেন একটি করে উইকেট।