নিয়মিত ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় শ্রীলঙ্কা সফরের দলে নেই। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। তবে তাকে যে সেরা একাদশে রাখা হবে সেই ইঙ্গিত নেই। বরং ব্যাটিং অর্ডার নিচের দিকে লম্বা করতে ওপেনিং থেকে একজন ব্যাটারকে একাদশের বাইরে রাখা হবে। বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে এমন ঘোষণা এখনও আসেনি কিন্তু কম্বিনেশন যা দাঁড়াচ্ছে তাতে শুরু থেকে একজন ব্যাটার যে কমছেন তা স্পষ্ট। আর তাই নাজমুল হোসেন শান্তকে আবারও ফিরতে হচ্ছে ওপেনিংয়ে। ক্যারিয়ারের শুরুতে যে পজিশনে খেলতেন তিনি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে শান্তর ওপেনিংয়ে খেলার আরেক কারণ লিটন দাশের ফেরা। লিটন টেস্টে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেন। ঠিক ওই জায়গাতেই আছেন জাকের আলি। জাকের এই মুহূর্তে দলের সেরা পারফরমার। আর লিটন টেস্টে অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটার।
জাকের-লিটন-মিরাজদের অর্ডার ঠিক রাখতে হবে, এছাড়া এই পজিশনে খেলা তিন ক্রিকেটারই অপরিহার্য। তাই ওপেন থেকেই একজনকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। আর পজিশন বদলে সেখানেই শান্তর খেলার সম্ভাবনা। গতকাল বহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ব্যাপারটি গোপনই রাখতে চাইলেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘এটা (ওপেনিংয়ে নামব কিনা) নিয়ে আসলে এখন এখানে বলতে চাই না। কারণ হলো প্রতিপক্ষ যদি দেখে, তাহলে বিষয়টি অনেক আগে থেকে ওপেন হয়ে যাবে। আমি যে কোনো পজিশনে খেলতে প্রস্তুত আছি। আমাদের আরও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আছে। তো দলে বিকল্প আছে, দেখা যাক।’ কেন জয়কে দলের বাইরে রাখা হয়েছে বা একজন ব্যাটার কেন কম খেলছেন তা একাদশ ঠিক হলে সবাই বুঝবেন বলে জানালেন শান্ত, ‘যখন খেলা শুরু হবে, তখনই বুঝতে পারবেন আমরা কী চিন্তা করে দলটা বানিয়েছি, বুঝতে পারবেন কেন দলে একটা ওপেনার কম। কম্বিনেশনটা দেখলে সবার পক্ষে আরও ভালোভাবে বুঝতে সুবিধা হবে। আমাদের দলে ৪টা করে পেসার ও স্পিনার আছে। মানে ভারসাম্যটা আছে। আমরা কন্ডিশন দেখে দুই ধরনের কম্বিনেশনেই যেতে পারি। দল নিয়ে আমি খুশি। ভারসাম্য করার মতোই দল।’
তিনে রেকর্ড সবচেয়ে ভালো হলেও সেখান থেকে সরে গিয়ে প্রথমে চারে এবং এখন ওপেন করতে নামার চিন্তা কেন। সেটা এখনই বলতে চান না তিনি। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি বিজয়। এই জায়গায় ঘাটতি পূরণের চিন্তা থাকতে পারে। এছাড়া এক সিরিজ পরই স্কোয়াডে ফিরেছেন কিপার ব্যাটার লিটন দাস। তিনি গত তিন বছরে টেস্টে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটার। একাদশে তার ঠাঁই পাওয়া নিয়ে আপাতত সংশয় নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পিএসএলের কারণে ছুটি নিয়েছিলেন লিটন। তার জায়গায় কিপার ব্যাটার হিসেবে খেলে ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন জাকের আলি অনিক। লিটন-জাকের দুজনকেই যাতে একাদশে রাখা যায় সেজন্য উপরের দিকে একটা জায়গা তৈরির চিন্তাও থাকতে পারে। টেস্টে কেবল ৬ ইনিংস ওপেন করেন শান্ত। যাতে ১৮.৮৩ গড়ে ১১৩ রান তার, আছে একটাই ফিফটি। তিনে তিনি খেলেছেন সবচেয়ে বেশি ৪৫ ইনিংস। এই পজিশনে ৩৩.২২ গড়ে ১৪৬২ রান করেছেন, সেঞ্চুরি আছে ৫টি, ফিফটিও তিনটি। গত কয়েক টেস্ট ধরে অবশ্য চারে নামছিলেন শান্ত। গুরুত্বপূর্ণ চার নম্বরে ৯ ইনিংস খেলে ২৩ গড়ে ৪০২ রান করেছেন ১ ফিফটিতে। এছাড়া পাঁচে চার ইনিংস ব্যাট করে ৮০ রান আছে শান্তর।
এদিকে লর্ডসে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চলছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। ক্রিকেট বিশ্বের নজর আপাতত সেদিকে। এরকম একটা বড় মঞ্চে কবে বাংলাদেশ খেলতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত থাকলেন বাস্তবতার জমিনে। এই মুহূর্তে এমন চিন্তাকে রীতিমতো বোকামি বলছেন তিনি। তারচেয়ে বরং অভিজাত সংস্করণে ছোট ছোট ধাপে এগুনোর ভাবনা তার। কদিন আগেই ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। এই দলের কাছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের চিন্তা অলীকই হওয়ার কথা। তবে গত চক্রে বাংলাদেশের ফল ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। পয়েন্ট টেবিলে সাতে শেষ করতে পেরেছেন শান্তরা। ১২ টেস্ট খেলে তারা জিতেছেন ৪ টেস্ট, হেরেছেন ৮টিতে। ওই চার জয়ের তিনটাই আবার এসেছে ঘরের বাইরে।
আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট দিয়ে নতুন চক্র শুরু করবে বাংলাদেশ। সেখানে আগেরবারের চেয়ে ভালো করার লক্ষ্য রাখছেন শান্ত। তবে ফাইনালের কথা চিন্তাতেও আনতে চান না তিনি, ‘এটা (চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলা) তো অনেক বড় স্বপ্ন। এখনই এত দূরে যদি চিন্তা করি তাহলে বোকামি হবে। ছোট ছোটভাবে যদি আমরা এগোতে পারি তাহলে খুব ভালো।’ শান্ত উদাহরণ টেনে বুঝালেন টেস্টে চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের ফলাফলে উন্নতির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রাখতে চান আপাতত, ‘আপনি যদি দেখেন গত চক্রের আগের চক্রে আমরা শুধু একম্যাচ জিতেছিলাম। গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি।
আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে কীভাবে এই চক্রে আরও ২-৩টা বেশি ম্যাচ জিততে পারি। এভাবে ছোট ছোট চিন্তা করে এগুলে একটা সময় গিয়ে হয়ত বাংলাদেশও ফাইনাল খেলবে। কিন্তু এখন আমাদের লক্ষ্য গত বছরের থেকে কীভাবে ভালো ফল করতে পারি।’ শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু হলেও এই বছর আসরটিতে কেবল দুইটাই টেস্ট বাংলাদেশের। বছরের শেষ দিকে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয়।
বাংলাদেশের মূলত বেশিরভাগ ম্যাচ পরের বছর। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি করে টেস্ট খেলবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে খেলবে আরও দুই টেস্ট। এরপর ২০২৭ সালের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই টেস্ট খেলার পর অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে খেলবে দুই টেস্ট। অর্থাৎ মোট ১২ টেস্টই আছে এই চক্রেও। চ্যালেঞ্জটাও সব মিলিয়ে বেশ কঠিন।