ঘরের মাঠে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ দল। এই হারের পর জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে। সমর্থকরা এই স্প্যানিশ কোচকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলছিলেন। এবার খোদ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী কমিটি এবং জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাখাওয়াত হোসেন ভুঁইয়াও একই দাবি জানালেন। গতকাল শনিবার ফেডারেশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম নিয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিত আউয়ালের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
গত ১০ জুন এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হারে। হামজা চৌধুরী, শমিত সোমের মতন তারকারা আসায় এই ম্যাচ নিয়ে তৈরি হয়েছিল তুমুল হাইপ, মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছিল কয়েকগুণ। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। এই ম্যাচে দলের কৌশল, খেলোয়াড় নির্বাচন এবং বদলি খেলোয়াড় নামানো নিয়ে কাবরেরা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। কাবরেরার দল নির্বাচনে ত্রুটি ও খেলার কৌশলে অপরিপক্বতাসহ হামজা- রাকিবদের ঠিকমতো তাদের পজিশনে ব্যবহার করতে না পারাটা অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। শুধু তাই নয়, হামজা-রাকিবদের কোচ হিসেবে কাবরেরা কতটুকু যোগ্য- এ নিয়েও সমালোচনা চলছে। খেলোয়াড়দের একটি অংশও তার ওপর নানানভাবে বিরক্ত।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া দেখলেই পরিষ্কার প্রায় সব ফুটবলমোদীরা কাবরেরার পদত্যাগ চাইছেন। তার জায়গায় হামজাদের মানের খেলোয়াড়দের জন্য অন্য কোনো হাই প্রোফাইল কোচ নিয়োগে জোরদার আবেদন সবার। যেন জাতীয় দল আরও শক্তিশালী হয়। সংবাদ সম্মেলনে সবার শেষে বাফুফের নির্বাহী সদস্য শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীনকে অভ্যন্তরীণ অডিট ও গভর্মেন্ট রিলেশন নিয়ে আলোকপাত করার অনুরোধ জানান সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার। শাহীন এই বিষয়ে বক্তব্য না রেখে জাতীয় দল কমিটির সদস্য হিসেবে সরাসরি কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে সবাইকে চমকে দেন। বাফুফের নির্বাহী সদস্য শাহীন বলেছেন, ‘আমি এখানে অডিট ও গভর্মেন্ট রিলেশন নিয়ে মন্তব্য করবো না। আমি জাতীয় দল কমিটির সদস্য। সে হিসেবে আমার একটাই এজেন্ডা। জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চাই। দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া এটি।’
তিনি কাবরেরার কৌশলের সমালোচনা করে বলেন, ‘কাবরেরা খেলার ১০ দিন আগে আসে। এভাবে এসে তিনি আসলে কতটা কাজ করতে পারেন সেটা নিয়েও আছে প্রশ্ন। এখানে ফুটবলার সাজানো আছে। আমাদের টিমে অনেক ভালো ফুটবলার আছে। কিন্তু কাবরেরা সিন্ডিকেট করে টিম করে রেজাল্ট নষ্ট করে। আজ আমি নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে পদত্যাগ চাই। কারণ দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে একমত হয়েছি যে তার পদত্যাগ চাই।’ যদিও বাফুফের সঙ্গে কাবরেরার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। এর মানে ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। এখন তাকে পদত্যাগ করতে গেলে বাড়তি জরিমানা দিতে হবে বাফুফেকে। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, আপাতত কাবরেরাকে বরখাস্ত করছে না বাফুফে। তবে জাতীয় দল কমিটির পরবর্তী সভায় সিঙ্গাপুর ম্যাচ হারের কারণ জানতে চাওয়া হবে এই স্প্যানিশ কোচের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেটা হয়েছে দুর্ভাগ্যজনক। এটা নিয়ে আমরা আভ্যন্তরীণ আলোচনা করবো।’ সংবাদ সম্মেলনে আবারও প্রশ্ন হলে তাবিথ বলেন, ‘এটা আসলে এখনও প্রি-ম্যাচিউর প্রশ্ন এবং উত্তর দিলেও প্রি-ম্যাচিউর হবে। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। যেখানে জাতীয় দল কমিটি অ্যাসেসমেন্ট ও রিভিউ হবে। সেখানে অ্যাসেসমেন্ট হওয়ার পর আপনাদের প্রশ্ন নেওয়া যাবে এবং উত্তরও দেওয়া যাবে।’