এক সময় খেলেছেন ছেলেদের সঙ্গে। কিন্তু এখন তিনি খেলতে চান মেয়েদের দলে। আর তাতেই ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছেন সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের কন্যা অনয়া বাঙ্গার। জন্মগতভাবে পুরুষ শরীরে জন্মগ্রহণ করলেও, ছোটবেলা থেকেই অনয়া নিজেকে একজন নারী হিসেবে অনুভব করতেন। নিজের এই পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন লিঙ্গ পরিবর্তনের। গত কয়েক মাসে বিদেশে সফলভাবে জেন্ডার রি-অ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি সম্পন্ন করেছেন তিনি। এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন সম্পূর্ণ নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনয়া।
এই পরিবর্তন তাঁর ক্রিকেট জীবনেও এনেছে বড়সড় প্রভাব। পুরুষদের ক্রিকেট থেকে সরে এসে, এখন তিনি নারীদের ক্রিকেটে নিজের জায়গা তৈরি করতে চান। এই লক্ষ্যে তিনি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে নারী ক্রিকেটে খেলার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা সম্ভবত প্রথম, যেখানে কোনো খেলোয়াড় লিঙ্গ পরিবর্তনের পর নারীদের দলে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ছেলে থেকে রূপান্তরিত নারী হয়ে ওঠার পর এবার তিনি সরাসরি আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মহিলাদের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য। সম্প্রতি অনয়া সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, তিনি তাঁর রূপান্তরের প্রক্রিয়া ও তার বৈজ্ঞানিক প্রভাব নিয়ে একটি বিশদ রিপোর্ট তৈরি করেছেন। সেই রিপোর্টের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির (এইচআরটি) পর তার দেহে যে পরিবর্তন এসেছে, তা একজন সাধারণ নারী ক্রীড়াবিদের মতোই।
তাই তিনি কোনো অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না। বরং, প্রতিযোগিতার নিয়ম মেনে তিনি নারীদের দলে খেলার মতোই যোগ্য। ভিডিও বার্তায় অনয়া বলেন, ‘রূপান্তরিত নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমার যাত্রার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক রিপোর্ট প্রথমবার সবার সামনে আনলাম। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে আমার শরীরে পরিকল্পিত ও স্থায়ী পরিবর্তন এসেছে। এই রিপোর্টে রয়েছে শুধু তথ্য, কোনও অনুমান নয়। আমি এই রিপোর্ট বিসিসিআই ও আইসিসির কাছে পাঠাব এবং তাদের সঙ্গে তথ্যভিত্তিক আলোচনা করতে চাই। আমি নিজের যোগ্যতা দিয়ে জায়গা করে নিতে চাই।’
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের পর থেকে আইসিসি রূপান্তরিত ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের বিষয়ে নীতিগতভাবে কিছু নমনীয়তা এনেছে। অনয়া সেই সুযোগকে বাস্তবায়িত করতে চান নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত প্রমাণ করে। তাঁর মতে, ‘বিজ্ঞান বলছে আমি মহিলাদের ক্রিকেট খেলার জন্য যোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যটা শোনার জন্য গোটা বিশ্ব কি তৈরি?’