
জাতীয় দলের পাইপ লাইনে থাকা একাধিক ক্রিকেটের ঘরোয়া আসরগুলোতে ধারাবাহিক পারফর্ম করেন। তাতে অনেকেই সুযোগও পান লাল-সবুজের জার্সিতে খেলার। তবে ঘরোয়ার সেই ফর্ম টেনে নিতে পারেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়ার পর ব্যর্থ হয়েছেন। ঘরোয়াতে ধারাবাহিক হলেও জাতীয় দলে যাওয়ার পরই কেন হারিয়ে যান এসব ক্রিকেটাররা? এমন প্রশ্নের উত্তর দিলেন কোচ সোহেল ইসলাম। বিসিবির এই কোচ জানালেন, অল্পেই তুষ্টি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় সমস্যা এটাই। একজন ব্যাটার একটি সেঞ্চুরি পেলে ধরে নেন পরের কয়েকটা ম্যাচে জায়গা নিশ্চিত। কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই-তিনটা সেঞ্চুরি পেলে অনেক বড় করে দেখা হয় সেটা। অথচ ভারতীয় ক্রিকেটে এটা সাধারণ ঘটনা। এ নিয়ে মাতামাতিও হয় না। তাই তাদের রানের ক্ষুধাটা বাড়ে প্রতিনিয়ত।
ভারত আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই ব্যবধানটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সোহেল ইসলাম। গতকাল রোববার বিসিবিতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ‘আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছি, সেটাই মূল বিষয়। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট দেখলে বোঝা যায়, কতটা প্রতিযোগিতামূলক। ওখানে একশো-দুইশো রান নিয়মিত ব্যাপার। আমাদের এখানে একটা সেঞ্চুরি হলেই আমরা সেটায় তৃপ্ত হয়ে যাই। কোচ ও মিডিয়াও তখন সেটাকে বড় করে তুলে ধরে।’
উদাহরণ হিসেবে সোহেল ইসলাম বলেছেন নাজমুল হোসেন শান্তর কথা। তিনি টানা কয়েক ম্যাচ ভালো খেললেও হঠাৎ করেই হারিয়েছেন ছন্দ। এ নিয়ে সোহেল বললেন, ‘এক টেস্টে দুইটা সেঞ্চুরির পর পরের ম্যাচে কেন সে (শান্ত) ব্যর্থ হচ্ছে। টানা রান করে যাওয়ার উদাহরণ আমাদের দেশে খুব কম। কিন্তু ভারত বা অন্য দেশগুলোতে প্রচুর উদাহরণ আছে। আমাদের ব্যাটারদের মানসিকতাটা বদলাতে চাই। রান হয়ে গেছে, সেটা ভুলে এবার কীভাবে আবার নতুন করে বড় ইনিংস খেলবে, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা এই বিষয়গুলোতে কাউন্সেলিং করছি। কথা বলছি।’ সোহেলের মতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে হবে, ‘আমরা এখনও অনেক সময় এক-দুই ম্যাচ দেখে কাউকে মূল্যায়ন করে ফেলি। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন অধিকাংশ ক্রিকেটারের গড় রান ও ধারাবাহিকতা বাড়বে, তখনই মান উন্নয়ন হবে। বড় ইনিংস খেলা ও ধারাবাহিক রান করাটা অভ্যাসের ব্যাপার। কিন্তু সেই অভ্যাসটাই আমাদের নেই।’
সৌম্য সরকারের লাল বলে খেলার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন সোহেল ইসলাম। তিনি আরও যোগ করেন, ‘কেউ টানা দুই ম্যাচে রান করছে- সে কীভাবে নিজের চিন্তাভাবনা সাজাবে, সেটা নিয়েই আমরা বেশি চিন্তা করছি। আমাদের সংস্কৃতিতে এই ব্যাপারটা ছিল না। কিন্তু শুরু তো করতেই হবে। আমরা সেই ক্ষুধাটা তৈরি করতে চাই- ভেতর থেকে যেন আসে। লাল বলে ৫০ গড় ভালো। কিন্তু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে গড় যদি ৮০ তোলা যায়, তাহলে উন্নতি হবে। একজন ভালো ব্যাটার কীভাবে খেলছে, তার গড়, স্ট্রাইকরেট- এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’ এছাড়া সোহেল ইসলাম কথা বলেছেন সৌম্য সরকারকে নিয়ে। এই ওপেনারকে এখন ভাবা হচ্ছে শুধু সীমিত ওভারের ফরম্যাটে। সৌম্য সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেছেন গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগে। এর আগে জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০২১ সালে।
সৌম্য আবারও লাল বলে খেলতে চান বলে জানালেন সোহেল, ‘আপনারা জানেন, সৌম্য জিএসএলে খেলছিল। আমরা যখন লাল বলের ক্রিকেট নিয়ে অনুশীলন করছিলাম। সে ফিরে আসার পর, আমরা এরইমধ্যে সাদা বলের অনুশীলন শুরু করে দিয়েছি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে কেউই একটিমাত্র ফরম্যাটে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। সৌম্য নিজেও লাল বলের ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী।’ সোহেল ইসলাম এটা ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘সকলেই সব ফরম্যাটে খেলতে চায়। আপনারা জানেন, লাল বল ও সাদা বলের ক্রিকেটের মধ্যে খেলার ধরনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। ব্যাটিং কৌশল, মানসিকতা, ম্যাচের পরিকল্পনা এবং শট প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। এই কারণেই আমরা খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিই, যাতে তারা জানে যে লাল বলে খেলার সময় তাদের মানসিক কৌশল কেমন হবে, তারা কীভাবে খেলবে এবং তাদের টেকনিকগুলো কীভাবে কার্যকর করবে।’