ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

টি-টোয়েন্টিতে বিবর্ণ বাংলাদেশ

আজ জয়ের বিকল্প নেই
টি-টোয়েন্টিতে বিবর্ণ বাংলাদেশ

দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি বিশ্বকাপ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দশম আসর। ৭ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী দিনেই কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তার আগে ঘরের মাঠে শেষ প্রস্তুতিমূলক সিরিজ খেলছে টাইগাররা। তবে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুটা ভালো করেতে পারেনি স্বাগতিকরা। বিশ্বকাপের আগে দলের পারফরম্যান্সও ভাবিয়ে তুলেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। এমন অবস্থায় গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও লিটন দাসের প্রকাশ্যে বিরোধ সামনে এসেছে। একজন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক। আরেকজন জাতীয় দলের অধিনায়ক। দল নির্বাচন নিয়ে দুজন দুই মেরুতে। কেউ কাউকেই সম্মান দিয়েও কথা বলছেন না।

মাঠে সেই বিরোধের কী প্রভাব পড়েছে কিংবা ড্রেসিংরুমে উপমহাদেশের ক্রিকেটের যে সংস্কৃতি, আরও গভীরে গেলে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে সংস্কৃতি তাতে দল নির্বাচনের মতের পার্থক্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু নির্বাচক-অধিনায়ক প্রক্যাশেই একে অপরকে দোষারোপ করছেন তা কিছুটা বিরল। মাঠের বাইরে এই অস্থিরতার প্রভাব কি দলের ভেতরে পড়ছে ওই সংস্কৃতির জোর দিয়েই বলা যায়, বাইরের অস্থিরতার বড় প্রভাব পড়েছে দলের ভেতরেও। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে সেই অস্থিরতাই বড় আতঙ্কের নাম। যদিও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো তাওহীদ হৃদয় বিষয়টি স্বীকারই করলেন না, ‘দল তো ওয়েল সেট।’

তাওহীদ অবশ্য দলের কম্বিনেশন নিয়ে ওয়েল সেটের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই কম্বিনেশনের কারণেই তো এতো অস্থিরতা, বিরোধ। শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে দলে না নেওয়াতে নির্বাচক-অধিনায়কের বিরোধ। বিশ্বকাপের আগে শেষ সিরিজে যা প্রকট আকারেই ধারণ করল। এই সময়ে দলের এমন বিবর্ণ রূপ দেখে শঙ্কার জায়গা আছে বটে। অথচ এই বছরই টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পারফরম্যান্সের সূচক উঠা-নামা করলেও ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়ে তুলতে পেরেছিলেন অধিনায়ক-কোচ। কিন্তু সেই দলেই এখন নানা কারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে তাওহীদের কথায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি মনে হলো না মোটেও, ‘আমার কাছে এরকম মনে হয়নি (বিশ্বকাপের আগে শঙ্কা জাগছে)। দল তো ওয়েল সেট। আপনি যদি দেখেন, সব ক্রিকেটার গত এক বছরে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে। সবাই পর্যাক্রমে খেলেছ ও ভালো খেলছে। সব ক্রিকেটার যদি সুযোগ পায়, অবশ্যই কাজে লাগাবে আর প্রত্যেকটা ক্রিকেটার চায় যে, সুযোগ যখনই আসুক, সেটা যেন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে।’

এ বছর টি-টোয়েন্টিতে বেশি সময় দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে পা রাখার পর এবারই সবচেয়ে বেশি ২৮ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর আগে গত বছর খেলেছিল ২৪ ম্যাচ। এ বছর ২৮ টি-টোয়েন্টির ১৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১৪টিতে। ১টিতে ফল আসেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হার। টানা চার টি-টোয়েন্টিতে হারের পর দল লাগছে অগোছালো। সাম্প্রতিক সময়টা খারাপ লেগেও তাওহীদ মনে করিয়ে দিলেন, অতীতের সাফল্য। সঙ্গে একটি জয়ই পুরো দলকে ছন্দে ফেরাবে বলে বিশ্বাস তার, ‘দলটা ভালো ছিল। এখনও ভালোই আছে। আমরা কখনও তো ভাবছি না যে, দল আমাদের ডাউন হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা টানা চারটা সিরিজ জিতেছি। একটা-দুইটা সিরিজ বা চারটা-তিনটা ম্যাচ খারাপ যেতে পারে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা ছন্দের খেলা খেলা। আমরা হারছি, আবার যখন দেখবেন যে আমরা জিততে শুরু করি, তখন দেখবেন কন্টিনিউ চলতে থাকবে।’

তিন ম্যাচের সিরিজ বাঁচাতে আজ জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। তাই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চায় আয়ারল্যান্ড। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি সরাসরি দেখাবে টি-স্পোর্টস চ্যানেলে।

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ম্যাচটি হারতে হয়েছে টাইগারদের। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮১ রান করে আয়ারল্যান্ড।

জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪২ রান করে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫০ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রান করেন হৃদয়। শুরুতেই ৩ উইকেট পতন বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে বলে জানান অধিনায়ক লিটন দাস। তিনি বলেন, ‘আমি জানি চট্টগ্রামের উইকেট মাঝে মাঝে ব্যাটিংবান্ধব, বিশেষ করে যখন শিশির থাকে। কিন্তু পাওয়ার-প্লেতে কিছু উইকেট হারিয়ে ফেললে পরের দিকের ব্যাটারদের জন্য পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়ে। দ্রুত চার উইকেট হারানো আমাদের সমস্যায় ফেলেছে।’ আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় সিরিজ হারের শঙ্কায় টাইগাররা। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত নয়বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। এরমধ্যে টাইগারদের জয় ৫ ম্যাচে ও হার ৩ ম্যাচে। ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। ২০২৩ সালে সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত