
ব্রিসবেন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এক হাতে চোখধাঁধানো ক্যাচ নিয়ে স্টিভেন স্মিথকে ফেরালেন উইল জ্যাকস। কিন্তু দিন শেষে যেন অনেকটা আড়ালেই পড়ে গেল তার বীরত্ব। এর আগে-পরে যে ইংল্যান্ডের ফিল্ডাররা ক্যাচ হাতছাড়া করল পাঁচটি! প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার সুযোগ পেয়েও তাই কাজে লাগাতে পারল না তারা। ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত অবদানে প্রথম ইনিংসে লিড পেয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩৭৮ রান। ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা ৫.১৭ করে। গোলাপি বলের লড়াইয়ে ৪৪ রানে এগিয়ে আছে স্বাগতিকরা। দিবা-রাত্রির টেস্টে এক দিনে কোনো দলের সর্বোচ্চ রান এটিই। ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টের প্রথম দিন ইংল্যান্ডের ৩৪৮ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের সবাই পেরিয়েছেন ত্রিশ, তিনজন করেছেন ফিফটি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ফিফটির স্বাদ পেয়ে ৭৮ বলে ৭২ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছেন জেইক ওয়েদেরল্ড। ১২ চার ও এক ছক্কায় গড়া এই ওপেনারের ইনিংসটি। মার্নাস লাবুশেন ৭৮ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় করেছেন ৬৫। এই ইনিংসের পথে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গোলাপি বলের টেস্টে এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ৫ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ৮৫ বলে ৬১, ৫৭ বলে ৪৫ ক্যামেরন গ্রিন। শূন্য ও ২৫ রানে জীবন পেয়ে ৪৬ রানে অপরাজিত আছেন অস্ট্রেলিয়ার শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স কেয়ারি।
গ্যাবায় দিনজুড়েই ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল উইকেট। প্রথম দিনের ৯ উইকেটে ৩২৫ রানের সঙ্গে গত শুক্রবার আর ৯ রান যোগ করে ৩৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ডান দিকে দৌড়ে ফুল লেংথ ডাইভে এক হাতে জফ্রা আর্চারের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন লাবুশেন। ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৮ রান করেন ইংলিশ পেসার।
আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেঞ্চুরি-খরা কাটানো জো রুট অপরাজিত রয়ে যান ১৩৮ রানে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ২০৬ বলের ইনিংসটি গড়া ১৫ চার ও এক ছক্কায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দিবা-রাত্রির টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর এটি। পেছনে পড়ে গেছে ২০১৬ সালে এই মাঠেই পাকিস্তানের আসাদ শাফিকের ১৩৭ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডের শেষ জুটিতে আসে ৫৮ বলে ৭০ রান।
জবাবে প্রথম তিন ওভার মেডেন দিয়ে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। ২০তম বলে প্রথম রানের দেখা পায় তারা ওয়েদেরল্ডের বাউন্ডারিতে। এরপর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান তিনি। পার্থে প্রথম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ঝড়ো সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক ট্রাভিস হেড এদিন শুরুতে ছিলেন নড়বড়ে। প্রথম দিনের দেখা পান তিনি ১৫ বলে। নবম ওভারে আর্চারের বলে তার ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন কিপার জেমি স্মিথ।
২৫ বলে ৩ রানে আউট হতে পারতেন যিনি, পরের ১৭ বলে তিনি করেন ৩০। যদিও ইনিংস বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি হেড (৪৩ বলে ৩৩)। তাকে ফিরিয়ে ৭৯ বলে ৭৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন ব্রাইডন কার্স। ওয়েদেরল্ড ফিফটি করেন ৪৫ বলে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারদের মধ্যে চতুর্থ দ্রুততম ফিফটি এটি। দ্বিতীয় উইকেটে তিনি আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি (৭৮ বলে ৬৯) গড়েন লাবুশেনের সঙ্গে। আর্চারের দারুণ ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হয়ে থামে ওয়েদেরল্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্মিথ ও লাবুশেন যোগ করেন ৬৯ বলে ৫০ রান। ৬৭ বলে ফিফটির পর বেন স্টোকসের বলে লাবুশেন আলগা শটে ক্যাচ দেন কিপারের গ্লাভসে।
দিনের সেরা জুটি এরপর গড়ে ওঠে স্মিথ ও গ্রিনের ব্যাটে। দ্বিতীয় সেশনে অস্ট্রেলিয়ার রান ছাড়িয়ে যায় দুইশ। গাস অ্যাটকিনসনের শর্ট বলে আঙুলে আঘাত পান গ্রিন। ফিজিওর শুশ্রƒষা নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান তিনি। স্মিথ ফিফটি করেন ৬৭ বলে। কিন্তু থিতু দুই ব্যাটসম্যানই বিদায় একই ওভারে। কার্সকে অনেকটা পেছনে সরে গিয়ে খেলার চেষ্টায় দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড হন গ্রিন, ভেঙে যায় ১১৪ বলে ৯৫ রানের জুটি।
পরের বলে গালিতে কেয়ারির ক্যাচ ফেলেন বেন ডাকেট। এক বল পরই জ্যাকসের সেই ক্যাচে স্মিথের বিদায়। শর্ট বল হুক করেন স্মিথ। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দারুণ ক্ষিপ্রতায় ডান দিকে ফুল লেংথ ডাইভে এক হাতে বল মুঠোয় জমান জ্যাকস।
ডাকেট পরে আরেকটি ক্যাচ ছাড়েন জশ ইংলিসের। অবশ্য স্টোকসের ওই ওভারেই বোল্ড হয়ে ফেরেন ইংলিস (২৫ বলে ২৩)। একপর্যায়ে ৩ উইকেটে ২৯১ থেকে অস্ট্রেলিয়া স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ৩২৯। উইকেট সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। দিনের শেষ দিকে পরপর দুই ওভারে আরও দুটি ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন ইংল্যান্ডের ফিল্ডাররা। কাভারে মাইকেল নিসারের সহজ ক্যাচ ফেলেন কার্স। স্লিপে হাত বাড়িয়ে কেয়ারির ক্যাচ মুঠোয় নিতে পারেননি রুট। জীবন পাওয়া দুই ব্যাটসম্যান ৫৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানের জুটিতে শেষ করেন দিনের খেলা।