ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পরনিন্দার ক্ষতি

হাদিউজ্জামান
পরনিন্দার ক্ষতি

অন্যের দোষ চর্চাকে গিবত বা পরনিন্দা বলে। এটি একটি বড় ধরনের পাপ। জিহ্বা সংযত রাখার মাধ্যমে এ পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায়। ইসলামি শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। জীবিত ব্যক্তির গিবত করা যেমন গোনাহ, তেমনি মৃত ব্যক্তির গিবত করাও গোনাহ। গিবত করা ও শ্রবণ করা দুটোই সমপর্যায়ের পাপ।

গিবত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, একবার রাসুল (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো গিবত কী? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-ই ভালো জানেন। নবীজি (সা.) বললেন, গিবত হলো তোমার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে বা যা শুনলে সে কষ্ট পাবে। সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলাল¬াহ! যদি বাস্তবেই সে দোষ তার মধ্যে থাকে, তাহলেও কি গিবত হবে? রাসুল (সা.) বললেন, যদি তার মধ্যে সে দোষ থাকে, তাহলে গিবত হবে। আর যদি বাস্তবে সে দোষ না থাকে, তাহলে সেটা হবে অপবাদ, যা আরো ভয়াবহ গোনাহ। (মুসলিম : ৬৭৫৮)।

কোরআনে গিবতের নিন্দা : পবিত্র কোরআনে গিবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘আর তোমরা একে অপরের গিবত কর না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বরং তোমরা তা অপছন্দই করবে।’ (সুরা হুজুরাত : ১২)। পেছনে পেছনে গিবত করা যেমন হারাম ও গোনাহ, সামনে গিবত করাও তেমন হারাম ও গোনাহ।

এ সম্পর্কে আল¬াহ পাক সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘ধ্বংস প্রত্যেক পেছনে ও সামনে পরনিন্দাকরীর।’ (সুরা হুমাযাহ : ০১)। গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসুল (সা.) তার উম্মতকে অবগত করেছেন। গিবতকে রাসুল (সা.) জিনা থেকেও মারাত্মক গোনাহ বলে অভিহিত করেছেন।

হজরত আবু সাঈদ ও জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, গিবত জিনা থেকেও মারাত্মক। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! গিবত কীভাবে জিনা থেকেও জঘণ্য অপরাধ হয়? রাসুল (সা.) বললেন, জিনা করার পর মানুষ আল¬াহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ পাক তা মাফ করবেন। কিন্তু গিবতকারীকে, যতক্ষণ পর্যন্ত যার গিবত করা হয়েছে সে মাফ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহপাকও তাকে মাফ করবেন না।’ (মেশকাত : ৪৮৭৪)।

পরনিন্দার ক্ষতি ও পরিণতি : হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, নিশ্চয় এই দুটি কবরে আজাব হচ্ছে। তবে কোনো কঠিন গোনাহের কারণে নয়, বরং একজনকে পেশাবের পবিত্রতায় অসতর্কতা ও অপরজনকে গিবত করার কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

(বোখারি : ২১৬)। অন্য হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, মেরাজের রাতে আমি একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখগুলো তামার। নখ দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আচড় দিচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম হে জিবরাইল, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের সম্মানহানি করত। অর্থাৎ গিবত করত।’ (আবু দাউদ : ৪৮৭৮)।

পরনিন্দা থেকে বাঁচার উপায় : ইচ্ছা করলেই পরনিন্দা থেকে বাঁচে থাকা যায়। অন্যের দোষ নিজে না বলা এবং কেউ অন্যের দোষ বর্ণনা করলে তা না শোনার প্রত্যয় গ্রহণ করা। আর এ প্রত্যয়ের ওপর দৃঢ় ও অবিচল থাকার মানসিকতা লালন করার মাধ্যমে পরনিন্দার পাপ থেকে সহজে বেঁচে থাকা যায়।

তবে কেউ কারো গিবত করে ফেললে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ যার গিবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তি জীবিত থাকলে তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়া কর্তব্য। সে যদি মারা যায় কিংবা দূরে কোথাও চলে যায়, ফলে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে মানুষের কাছে তার প্রশংসা করা এবং আল্লাহর কাছে তার গোনাহ মাফের প্রার্থনা করা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত