প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
রাগ মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। যা মানুষের জীবনের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়। অতিরিক্ত রাগ মানুষের বিবেকবোধকে নষ্ট করে দেয়, স্মৃতিশক্তি লোপ করে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। তাই ইসলামে রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
রাগ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব : যারা রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তারা মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহতায়ালা তাদের অনেক ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ রয়েছে, ‘আর যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায়ই অর্থসম্পদ ব্যয় করে। আর যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ ধরনের সৎকর্মশীলদের অত্যন্ত ভালোবাসেন। (সুরা আলে ইমরান : ১৩৪)।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের উত্তম বৈশিষ্ট্য। রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেই রয়েছে শান্তি ও পুরস্কার। রাসুলুল্লাহ (সা.) রাগ নিয়ন্ত্রণ করাকে বীরত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর হলো সেই, যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।’ (আবু দাউদ : ৪৭৭৯)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বীর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।’ (বোখারি : ৫৬৮৪)।
রাগ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বিষয়ে হাদিস শরিফে একটি সুন্দর ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি রাগ করো না।’ ওই ব্যক্তি কয়েকবার একই কথা বলেন এবং রাসুল (সা.) প্রতিবারই তাকে বললেন, ‘তুমি রাগ করো না।’ (বোখারি ৮/১৩৭)। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা জান্নাত লাভের সহজ মাধ্যম। বদমেজাজি ব্যক্তির জন্য জান্নাত লাভ করা কঠিন। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘অশ্লীল ভাষা ব্যবহারকারী ও উগ্র মেজাজের ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (আবু দাউদ : ৪১৬৮)। এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় রাগী ব্যক্তির পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় : রাগের সময় কিছু কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে ধীরে ধীরে রাগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। রাগ নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায় হলো-
১. অজু করা : কারও রাগ এলে সঙ্গে সঙ্গে অজু করে নেওয়া। এতে রাগ কমে যায়।
২. চুপচাপ থাকা : রাগের সময় কোনো কথা না বলে যথাসম্ভব চুপ করে থাকা। কেননা, রাগের মাথায় বেশি কথা বললে, তর্ক বা রাগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. অবস্থা পরিবর্তন করা : কারও রাগ এলে তার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগ এলে বসে বা শুয়ে পড়া।
৪. অন্য কাজে মনোযোগ দেওয়া : রাগের কারণ থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্য কিছুতে মনোযোগ দেওয়া। এতে ধীরে ধীরে রাগটা শেষ হয়ে যায়।
৫. ক্ষমা করে দেওয়া : রাগকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়া। নিজের মধ্যে সর্বদা ক্ষমার মানসিকতা তৈরি রাখা।
৬. দোয়া পড়া : রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বদা ‘আয়ুজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম’ পড়া। অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহতায়ালার নিকট পানাহ চাই। রাগ মানুষের ইহকাল ও পরকাল দুটোই ধ্বংস করে দেয়। রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। তাই আমাদের সর্বদা রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত।
লেখক : প্রাবন্ধিক