ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সন্তান প্রতিপালনে নবীজি (সা.)-এর ১০ নির্দেশনা

যুবাইর ইসহাক
সন্তান প্রতিপালনে নবীজি (সা.)-এর ১০ নির্দেশনা

মহানবী (সা.) সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে এমন কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যা সন্তানের নৈতিক উৎকর্ষ, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং আত্মিক বিকাশে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। তাঁর ১০টি নির্দেশনা উপস্থাপন করা হলো-

১. বিশুদ্ধ আকিদার শিক্ষা : সন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর প্রথম নির্দেশনা হলো শৈশব থেকে সন্তানের হৃদয়ে বিশুদ্ধ আকিদার ভিত্তি স্থাপন করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কিশোর বয়সে মহানবী (সা.) তাকে তাওহিদ ও তাকদিরের শিক্ষা দিয়েছিলেন। শৈশব থেকে আল্লাহর ওপর নির্ভরতা ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস সন্তানকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে এবং হতাশা থেকে মুক্ত রাখে। তিনি বলেছেন, ‘হে বালক, আমি তোমাকে কিছু বাক্য শেখাব : মহান আল্লাহর বিধানের হিফাজত করবে, তিনি তোমাকে হিফাজত করবেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য রাখবে, তাঁকে তোমার সামনে পাবে।’ (তিরমিজি : ২৫১৬)।

২. নামাজের নির্দেশ : মহানবী (সা.) শৈশব থেকে সন্তানকে ইবাদতে অভ্যস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষ করে নামাজের ব্যাপারে। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও এবং ১০ বছর বয়সে নামাজের জন্য (প্রয়োজনে) প্রহার করো।’ (আবু দাউদ : ৪৯৫)। নামাজের প্রতি যত্নশীলতা সন্তানের জীবনে শৃঙ্খলা, আত্মিক প্রশান্তি ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে।

৩. সমতা রক্ষা : সন্তানদের প্রতি আচরণ ও ভালোবাসায় সমতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘মহান আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমার সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করো।’ (বোখারি : ২৫৮৭)। তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও এবং ১০ বছর বয়সে নামাজের জন্য (প্রয়োজনে) প্রহার করো। (আবু দাউদ : ৪৯৫)। স্নেহ, উপহার বা আচরণে পক্ষপাতিত্ব সন্তানদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, যা তাদের মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর।

৪. দয়া ও কোমলতা : সন্তানের প্রতি দয়া ও কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি হযরত হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে চুমু দিতেন এবং বলেছেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’ (বোখারি : ৫৯৯৭)। দয়া ও কোমলতা পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও নির্ভরতার সম্পর্ক গড়ে তোলে।

৫. উত্তম চরিত্রের শিক্ষা : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দান করতে প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৮৯৫২)। পিতামাতার দায়িত্ব সন্তানের মধ্যে আমানতদারি, সততা, বিনয় ও সৎকর্মের মতো গুণাবলি প্রতিষ্ঠা করা। এটি নিজের আচরণ বা উপদেশের মাধ্যমে সম্ভব।

৬. কন্যাসন্তানের প্রতি গুরুত্ব : ইসলাম কন্যাসন্তানকে সম্মানের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানকে বয়ঃপ্রাপ্তি পর্যন্ত লালন-পালন করে, কেয়ামতের দিন তিনি ও আমি এমন অবস্থায় আসব।’ এই বলে তিনি তাঁর আঙ্গুল একত্র করলেন।’ (মুসলিম : ২৬৩১)। কন্যাসন্তানের উত্তম প্রতিপালন জান্নাত লাভের মাধ্যম।

৭. শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ : শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য মহানবী (সা.) উৎসাহ প্রদান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তাকে গভীর প্রজ্ঞা ও কোরআনের গূঢ় রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান দান করুন।’ (ইবনে মাজাহ : ১৬৬)। উৎসাহ শিশুকে আত্মবিশ্বাসী ও সফল করে তোলে।

৮. পাপ থেকে সতর্কতা : মহানবী (সা.) প্রজ্ঞা ও কোমলতার সঙ্গে সন্তানদের পাপাচার থেকে সতর্ক করতেন। এক যুবক অনৈতিক কাজের অনুমতি চাইলে তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কি নিজের মায়ের জন্য তা পছন্দ কর? যুবক বললেন, না। তিনি বললেন, লোকেরাও তাদের মায়ের জন্য তা পছন্দ করে না।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২২২১১)। এটি সন্তানকে যুক্তি ও কোমলতার মাধ্যমে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখার উত্তম দৃষ্টান্ত।

৯. কোরআনের প্রতি ভালোবাসা : মহানবী (সা.) সন্তানের হৃদয়ে কোরআনের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বোখারি : ৫০২৭)। কোরআনের শিক্ষা সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং নৈতিক বিকাশ নিশ্চিত করে।

১০. কল্যাণের জন্য দোয়া : সন্তানের জন্য কল্যাণকামনা করে দোয়া করা এবং তাদের ওপর বদদোয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের, সন্তান-সন্ততি, ভৃত্য বা সম্পদের ওপর বদদোয়া করো না।’ (আবু দাউদ : ১৫৩২)। পিতামাতার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন, যা সন্তানের জন্য নিরাপত্তা ও রহমত বয়ে আনে।

মহানবী (সা.)-এর এই নির্দেশনাগুলো সন্তান প্রতিপালনে একটি পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। এগুলো সন্তানের হৃদয়ে বিশুদ্ধ আকিদা, ইবাদতের অভ্যাস, নৈতিক শিক্ষা, সমতা ও কোমলতা প্রতিষ্ঠা করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত