ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

রায়হান রাশেদ
জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

নামাজ ফরজ বিধান। ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য নামাজ ছাড়ার সুযোগ নেই। অসুস্থ হলেও নামাজ পড়তে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। নামাজ মুমিনের সৌভাগ্যের সোপান, শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। খোদার দরবারে প্রিয় হওয়ার উপলক্ষ। ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। জামাতে নামাজ মানুষকে ফুরফুরে রাখে। চিত্ত সতেজ করে তোলে। মনপাড়ায় পরিশুদ্ধ ও পবিত্রতার বারিধারার ঢল নামে। জামাতে নামাজে প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা : ৪৩)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কী মর্যাদা আছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তা হলে তা পাওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারি করত। দুপুরের নামাজের যে মর্যাদা আছে তা যদি তারা জানতে পারত, তা হলে তারা এটা লাভ করার জন্য প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। এশা ও ফজরের নামাজের মধ্যে যে (তাদের জন্য) কী মর্যাদা রয়েছে, তা যদি জানতে পারত, তা হলে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও এসে নামাজে উপস্থিত হতো।’ (মুসলিম : ৮৬৭)।

পবিত্র কোরআনের আয়াত থেকে জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব জানা যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং (হে নবি,) আপনি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন ও তাদের নামাজ পড়ান, তখন (শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময় তার নিয়ম এই যে) মুসলিমদের একটি দল আপনার সঙ্গে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখবে। অতঃপর তারা যখন সেজদা করে নেবে, তখন তারা তোমাদের পেছনে চলে যাবে এবং অন্য দল, যারা এখনো নামাজ পড়েনি, সামনে এসে যাবে এবং তারা আপনার সঙ্গে নামাজ পড়বে। তারাও নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।’ (সুরা নিসা : ১০২)। চিন্তা করুন, যুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহ বলছেন জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য। তা হলে কি নামাজ ছাড়ার কথা চিন্তা করা যায়!

২৭ গুণ বেশি সওয়াব : জামাতে নামাজ আদায় করা মোমিনের স্বভাব। এর সওয়াব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বোখারি : ৬৪৫)।

জামাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি : রাসুলুল্লাহ (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার নামাজ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ৭৯৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তির ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছেন। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। হাদিসে বিধৃত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম করে বলছি! অবশ্যই আমি সংকল্প করেছি, আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেব, তারপর আমি নামাজের হুকুম দেব এবং এ জন্য আজান দেওয়া হবে, তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করব সে লোকদের নামাজ পড়াবে। এরপর আমি ওই লোকদের দিকে যাব, যারা জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘর তাদের সামনেই জ্বালিয়ে দেব।’ (বোখারি : ২৪২০)।

যাদের জামাত ছাড়ার সুযোগ আছে : বিশেষ অপারগতার কারণে জামাত ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, ঘর থেকে বের হলে, অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা, রাস্তায় বেশি কাদা ও অতি অন্ধকার থাকলে, অন্ধ ব্যক্তি, শত্রুর ভয়, বন্দি ব্যক্তি প্রমুখের জন্য জামাতে নামাজ না পড়ার অনুমতি আছে।

জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য ইমাম নির্বাচন করতে হবে এবং ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করতে হবে। ইমাম ছাড়া জামাতে নামাজ হয় না। ইমাম নির্বাচন নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) দিকনির্দেশনা রয়েছে। আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দলের মধ্য থেকে (নামাজের জন্য) ইমাম তিনি হবেন, যিনি কোরআনের জ্ঞানে সবার চেয়ে অগ্রগণ্য। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি সুন্নাহর জ্ঞানে অগ্রগণ্য তিনি ইমাম হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে হিজরতকারী তিনি ইমান হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণকারী তিনি ইমাম হবেন। কেউ যেন কারও কর্তৃত্বের জায়গায় তার ইমাম না হয় এবং কেউ যেন কারও গৃহে তার সম্মানের জায়গায় অনুমতি ছাড়া না বসে।’ (মুসলিম : ৬৭৩)।

নামাজের ইমাম বানাতে হবে যোগ্য ব্যক্তিকে। ইমাম সমাজেরও অভিভাবক বা নেতা। ইমাম সভ্য ও আদর্শিক মানুষ, পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হলেন (নামাজের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি : ২০৭)।

ইমাম হওয়া বা ইমামতি করার জন্য ব্যক্তির মাঝে কিছু যোগ্যতা ও শর্ত থাকতে হয়। যথা- মুসলমান হওয়া, পুরুষ হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কেরাত পড়তে সক্ষম হওয়া, নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো ইমামের মধ্যে থাকা ও ওজর তথা যাবতীয় অপারগতামুক্ত হওয়া। (কুবরা লিল-বায়হাকি : ৬০৬৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত