আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আজকের এই দিনে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করেছিল বাংলাদেশ। ২০০০ সালের ২৬ লাল সবুজের পতাকার দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির টেস্ট পরিবারের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তারই পঁচিশ বছর পুর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তী উদযাপন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ উদযাপনের আরও একটি উদ্দেশ্য আছে। সেটি হল ঘুমিয়ে পড়া ক্রিকেকে জাগ্রত করা কিম্বা ক্রিকেটের ঝিমিয়ে পড় উন্মাদনা ফিরিয়ে আনা। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর উদযাপনে দেশব্যাপী বিসিবির যে উৎসব, এর অংশ গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে রিয়া গোপ উইমেনস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে নানা আয়োজন ছিল। সকালের ঘুম বাদ দিয়ে ব্যাট-বল নিয়ে নেমে পড়া কিশোর-কিশোরীদের মতোই দেশের ঘুমিয়ে পড়া ক্রিকেটকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যেই রজতজয়ন্তী উদযাপনের উদ্যোগ, বললেন বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মাইলফলকের ২৫ বছর পূর্তিতে গত শনিবার থেকে চলছে বিসিবির আয়োজন। ঢাকার আগে খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে হয়েছে অনূর্ধ্ব-১২ সিক্স-এ-সাইড টুর্নামেন্ট, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ধারাভাষ্য প্রতিযোগিতা, ‘হিট দা স্টাম্প’ চ্যালেঞ্জসহ নানান আয়োজন। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিসিবি সভাপতি। ম্যাচ শুরুর আগে নিজে ব্যাটিং-বোলিংও করেন আমিনুল। পরে তিনি ঘুরে দেখেন দুই মাঠের খেলা। খেলায় ব্যস্ত থাকা ক্ষুদে ক্রিকেটারদের অভিভাবকদের ক্রিকেটের মৌলিক ধারণা দিতে যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে মূল দুটি কারণ জানান আমিনুল। ‘আশা করেছিলাম, ২৫ বছরে হয়তো ২৫টা আয়োজন হবে। ২৫তম বছরে এসে প্রথম করছি। দুটি কারণে করেছি- প্রথমত, টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর উদযাপন। আরেকটা হলো, দেশব্যাপী বহু জায়গায় ক্রিকেট ঘুমিয়ে ছিল, তাদের একটা ‘ওয়েক আপ’ কল দেয়া। এটা আমরা অত্যন্ত সফলভাবে করার চেষ্টা করছি এবং করছি।’ বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পরিচয়। টেস্ট খেলে বলেই আইসিসির পূর্ণ সদস্য বাংলাদেশ। এটা যেন আরও ফোকাস করতে পারি, টেস্ট দলের পারফরম্যান্স ও দেশব্যাপী ক্রিকেটের উন্মাদনা, মানুষ যে ক্রিকেট ভালোবেসে বাংলাদেশের ভালোবাসা বুকে ধারণ করতে চায়, এসব অবজেক্টিভ নিয়েই কাজ করছি এবং অত্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ ২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ১০ নভেম্বর প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ।
আমিনুল ছাড়াও নাইমুর রহমানের নেতৃত্বে ওই ম্যাচের স্কোয়াডে ছিলেন মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন, আকরাম খান, এনামুল হক, খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার, আল শাহরিয়ার রোকন, জাভেদ ওমর বেলিম, ফাহিম মুনতাসির, মেহেবার হোসেন, শাহরিয়ার হোসেন, বিকাশ রঞ্জন দাস, রাজিন সালেহ, মঞ্জুরুল ইসলাম। ওই ম্যাচের সতীর্থদের নিয়ে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার টেস্ট মর্যাদার রজতজয়ন্তীর আনন্দ ভাগাভাগি করতে চান আমিনুল। ‘আমাদের আগের ক্রিকেটার যারা ছিলেন, ফারুক (আহমেদ) ভাই, আতাহার (আলি খান) ভাই ছিলেন, (মিনহাজুল আবেদিন) নান্নু ভাই ছিলেন- অনেক ক্রিকেটার ছিল যারা টেস্ট খেলার সুযোগ পায়নি। আমরা ওই সময় নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতাম যে, প্রথম টেস্টে খেলতে পেরেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘সেই স্কোয়াডের যারা অ্যাভেইলেবল আছে, সবাইকে কালকে (বৃহস্পতিবার) আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে দাওয়াত দিয়েছি। মূলত আমাদের ২৫ বছরের সেই স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া, আমাদের সেই ক্রিকেটের বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে এবং তাদেরকে সম্মাননা জানানো।’
আজ বিকাল ৪টায় শুরু হবে প্রথম টেস্টের সদস্যদের নিয়ে আয়োজন। শুরুতেই বিশেষ টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে কেক কাটবেন তারা। পরে টেস্ট মর্যাদার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ ব্লেজার পরিয়ে দেওয়া হবে প্রথম ম্যাচের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ছোট্ট পরিসরের আয়োজন। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার।