ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন

রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন

চলতি বছর কৃষি প্রণোদনা ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে রংপুর অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা রংপুর অঞ্চলে পাঁচ জেলার বোরো ধান আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে চালের গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ২২ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে। ধানের হিসেবে ৩৫ লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে।

রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা জেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলে পাঁচ জেলার মোট আবাদের ১৫ শতাংশ ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিক সংকটে এবারও রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার কৃষি মৌসুমি শ্রমিকরাও রয়েছে চাঙ্গাভাবে। এবার বোরো মৌসুমে ধান কাটা মাড়াই করে এক মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় করবে কৃষি শ্রমিকরা। গত কয়েক মৌসুম থেকে কৃষি শ্রমের মূল্য ৫/৬ গুণ বৃদ্ধি হওয়ায় শ্রমিকরা বেজায় খুশি।

এদিকে ধান কাটা মাড়াই করতে কৃষি শ্রমিক পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দিন হাজিরায় ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। মিঠাপুকুরের কৃষক আশরাফুল, রংপুর সদরের গৌরাঙ্গ রায়, মন্টু মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, হাট বাজারগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির বোরো ধান কেনা বেচা হচ্ছে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। কোথাও এরচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা জানান, ৫ বছর আগেও ১ একর জমির ধান কাটা মাড়াই করতে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা লাগত। এক দোন (২৪ শতক) জমির ধান কাটা মাড়াই করে ঘরে তুলতে কৃষকদের খরচ হচ্ছে প্রায় চার হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি একরে খরচ পড়ছে প্রায় ১২/১৪ হাজার টাকা।

অপরদিকে, দিন হাজিরায় যেসব শ্রমিক কাজ করত তাদেরও মজুরি বেড়েছে কয়েকগুণ। ৫/৭ বছর আগে দেড়শ টাকায় যে শ্রমিক দিন হাজিরায় কাজ করত এবার তারা ৫০০ টাকার নিচে কাজ করছে না। কোনো কোনো স্থানে তিন বেলা খাওয়াসহ এই হাজিরা পাচ্ছেন।

এদিকে রংপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন কৃষকদের ধান চাষে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। রংপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মো. মনিরুজ্জামান জানান ধানে খেতে কোনো প্রকার রোগ দেখা দিলে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসতেছি। আশা করি এবার ধান সহ সকল ফসল ভালো দাম পাওয়া যাবে। তিনি কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম জানান রংপুর জেলায় ৪০ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে বীজ ধানের কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন সলমন পদ্ধতি তে ১শ ৫০ একর করে দুটি প্রদর্শনী প্লট করা হয় । এতে করে কৃষককে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা হয় ।

সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে প্রায় ১০ লাখ, নীলফামারীতে ৫ লাখ, লালমনিরহাটে ৪ লাখ, গাইবান্ধায় ৬ লাখ, কুড়িগ্রামে ৭ লাখ, দিনাজপুরে ১২ লাখ, ঠাকুরগাঁয়ে ৭ লাখ, পঞ্চগড়ে ৩ লাখ কৃষি শ্রমিক রয়েছে। এরা শুধু আমন ও বোরো মৌসুমে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করেন। অন্য সময়ে এরা শহরে রিকশা, ভ্যান অথবা অন্য কোনো পেশা গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। ফলন ও ভালো হয়েছে।

তিনি বলেন রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা জেলার নদীর চরাঞ্চলে প্রচুর রোবো আবাদ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছে। মাঠে কৃষকরা এখন কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বোরো ধান,বাম্পার ফলন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত