ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১০ সুপারিশ

সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১০ সুপারিশ

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে দশটি সুপারিশ করেছে। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দশটি সুপারিশ এবং মে মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সংগঠনটি জানায়, বিদায়ী মে মাসে দেশের গণমাধ্যমে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত, ১১৯৬ জন আহতের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই মাসে রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত, ১৪ জন আহতের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত এবং ১২১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে এই সময়ে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ, নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ ও আহতের ১৬.৮০ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এসময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৯৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৯.৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৯.৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯.০৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৫.০২ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেঁছিয়ে ০.৩৩ শতাংশ, এবং ০.৫০ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩.৫০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩২.৮৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.১৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৫১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৫০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ :

১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল।

২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো।

৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুঘটনায় পতিত হয়েছে।

৪. মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।

৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।

৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতি দশটি সুপারিশ করেছে। তা হচ্ছে-

১. জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।

২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।

৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।

৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।

৫. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।

৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।

৭. সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।

৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা এবং

১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত