ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জাবিতে ৩২৩ কোটির বাজেট পাস

জাবিতে ৩২৩ কোটির বাজেট পাস

ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেটরদের নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪২ তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। এতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মূল বাজেট পাস করা হয়েছে।

বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সিনেট হলে উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব এ বাজেট উপস্থাপন করেন। তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মূল বাজেট পেশ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ

৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে এবার বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

বাজেট পূর্ব বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ বলেন, "২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের জন্য ৪১৫ কোটি ৭৮ লক্ষ ১ হাজার টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের ৪৩৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকার মূল বাজেট ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটে ৩৩৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের মূল বাজেটে ৩২৩ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে একটি কল্যাণমুখী বাজেট প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।"

বাজেট ঘাটতির কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সরকারী বিধি বহির্ভূতভাবে কিছু কিছু খাতে যেমন- জাবি স্কুল ও কলেজের ব্যয়, গবেষণা ভাতা, নৈশ ভাতা, গার্ড বোনাস, স্বাস্থ্য বীমা খাতের ভর্তুকী, ডাইনিং হলের অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খাতসমূহে ব্যয় করাই বাজেট ঘাটতির অন্যতম কারণ। এসকল খাত সমূহে চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরের জন্য ইউজিসি হতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

বিগত বছরগুলোর মতো এবারের বাজেটেও বেতন-ভাতা বাবদ সর্বোচ্চ বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা যা মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাবদ ৭২ কোটি ২৮ লাখ এবং পেনশন ও অবসর সুবিধা বাবদ রাখা হয়েছে ৫ কোটি ৮১ লাখ । এ দুই খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এদিকে গবেষণা ও উদ্ভাবনে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে গত বছরের বাজেটের তুলনায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১ শতাংশেরও কম।

এছাড়া অন্য খাতগুলোর মধ্যে যন্ত্রপাতি খাতে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যানবাহন ক্রয় বাবদ শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাবদ শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ, অন্যান্য মূলধন জাতীয় ব্যয়ে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যয় বাবদ ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে ছাত্র কল্যাণ তহবিলে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) খাতে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ বছর বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গবেষণা ভাতা, নৈশ ভাতা ও ইন্টারনেট ভাতা খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে বিশেষ সুবিধা খাতে ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৭ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হতো।

এবছর আয়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি থেকে আসবে ২৮৯ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতে প্রাপ্ত ফিস বাবদ আসবে ৬ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ভর্তি ভরণ বিক্রি থেকে আয় হবে ২৩ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এবং বিভিন্ন চার্জ থেকে আসবে ৩ কোটি ৭১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় হবে ৩৩ লক্ষ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস হতে আয় হবে ১০ কোটি ১৫ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মোট নিজস্ব আয়ের পরিমাণ ৪৪ কোটি টাকা।এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বরাদ্দ ২৮৯ কোটি টাকা সহ মোট প্রাক্কলিত বরাদ্দের পরিমাণ ৩২৩ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা।

গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন ভাতা বাবদ সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে ১৮০ কোটি যা ছিল মোট বাজেটের ৫৩.২৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে। গত বছর এ খাতে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল যা ১৭.৭৬ শতাংশ । এ বছর বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ যা মোট বরাদ্দের ১১.৯৯ শতাংশ । গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে এ বছরে বরাদ্দ রয়েছে ৬০ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ২.১৪ শতাংশ । এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ২.৮৫ শতাংশ । প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা বা চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ ছিল ৮০ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ২৪ শতাংশ । এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকায় যা মোট বরাদ্দের ০.১৪ শতাংশ । অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ১.২ শতাংশ। এবারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা যা মোট বরাদ্দের ১.৩১ শতাংশ। যন্ত্রপাতি খাতের ব্যয় ২ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা অর্থাৎ ০.৮৬। যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ১.৭৭ শতাংশ। যানবাহন ক্রয় বাবদ ব্যয় গত বছর কোন বরাদ্দ ছিল না তবে এ বছর এ খাতে ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা রাখা হয়েছে। অন্যান্য মূলধন জাতীয় ব্যয় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ০.৪৯ শতাংশ।

অধিবেশনেকালে সার্বিক বাজেট প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ব্যতীত গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, গাড়ি ভাড়া, রোড ট্যাক্স ইত্যাদি বাবদ প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও জাবি স্কুল ও কলেজের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলেও এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই দুটি খাত আমাদের বাজেট ঘাটতি ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। এর বিপরীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো খাত নেই।"

বাজেট,পাস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত