উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য উদ্ভাবন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছেন ইরানি নারীরা। বিশ্বমঞ্চে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করে তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, প্রযুক্তির মতো জটিল ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ ক্ষেত্রেও নারীদের সম্ভাবনা অনন্য ও উজ্জ্বল। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে ইরানি নারীদের অর্জন আজ নজর কেড়েছে সকলের। বিশেষ করে, ‘ব্রিকস নারী স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা ২০২৪’-এ ইরানি নারীরা দারুণ সাফল্য অর্জন করেছেন। প্রতিযোগিতাটিতে অংশগ্রহণকারী ৩০টি দেশের হাজারো আবেদনকারীর মধ্য থেকে নির্বাচিত হয় ২৬টি উদ্ভাবনী প্রকল্প, যার মধ্যে রাশিয়ার পরে ইরান ছিল সর্বোচ্চ বিজয়ী দেশের তালিকায় দ্বিতীয়।
ইতিহাস রচনা করলেন চার ইরানি নারী : এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া চারজন ইরানি নারীর নাম। আজম কারামি, মাহভাশ আবিয়ারি, মারজিহ ইব্রাহিমি, ফাতেমে হোসেইনি। আজম কারামি একজন পিএইচডি ইঞ্জিনিয়ার যিনি একটি জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ড্রোন, রিমোট সেন্সিং, ডেটা মাইনিং ও ইন্টারনেট অফ থিংসের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। ফাতেমে হোসেইনি এমন একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক, যারা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুবিষয়ক রোগীদের সহায়তায় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তাদের তৈরি ‘ইন্টেলিজেন্ট স্পুন ফর ট্রেমার অ্যালিভেশন’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে ইরানকে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে এমন প্রযুক্তিতে সক্ষম করেছে। মারজিহ ইব্রাহিমি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ইমিউন সেল ব্যাংক, যা ক্যান্সার ও অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তার গবেষণা প্রকল্প এরমধ্যেই বৈজ্ঞানিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। মাহভাশ আবিয়ারি তৈরি করেছেন ‘ইনসাইটফুলি স্ক্যানড গ্লুকোজ মনিটরিং’ নামের একটি স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে রোগীর আচরণ বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নির্ধারণে সাহায্য করে।
নেতৃত্বের দায়িত্বেও নারীরা : সম্প্রতি ইরানে জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলির পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ইরানি ক্যালেন্ডার ১৪০০ (২০২১-২২) সালের তুলনায় ২০২৫ সালের শুরুতে নারী ব্যবস্থাপকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে- ১,০৯২ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,২৫০ জনে। তবে, এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ইরানে আধুনিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক কোম্পানির মাত্র ১২ শতাংশ নারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, এবং পরিচালনা পর্ষদের মোট সদস্যদের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ১৯ শতাংশ (৫,১৫৪ জন)। যদিও এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, তবুও প্রযুক্তি খাতে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও একটি বাস্তবতা।
উদ্ভাবনে নাফিসে হাতামি : অন্যদিকে, নাফিসে হাতামি ডিজিটাল প্রমাণীকরণে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে খুব দ্রুত ডিজিটাল স্বাক্ষর ও ডিজিটাল অর্থনীতির বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইরানি নারীদের এই অগ্রযাত্রা শুধু তাদের নিজেদের দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের নারীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তারা যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন, তা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের নারী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।