পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা নদী ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝে দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। নদীমাতৃক জেলার সাত উপজেলার চরাঞ্চলের মাটি উর্বর ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্বীপের কৃষকের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে ক্যাপসিকাম, শসা, বরবটি, চিচিঙ্গা, করলা, লাউ, টমোটো, খিরা, মিষ্টি কুমড়া ও শিমসহ অন্যান্য সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে। তাই চরের বিস্তীর্ণ জনপদে এখন ফসলের খেতে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। ভোলা সদর উপজেলার মাঝের চর, রাজাপুর, বড়াইপুর, রামদাসপুর, চর চটকিমারা, চর হোসেন, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চর, মাঝের চর, বোরহানউদ্দিনের চর লতিফ, গঙ্গাপুর চর, চর ব্যারেট, চর ছমিরউদ্দিন, লালমোহনের কচুয়াখালী চর, চর শাহজালাল, তজুমদ্দিনর উপজেলার চর জহিরউদ্দিন, মনপুরার চর কলাতলি, ঢালচর, বদনার চর এবং চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর পাতিলাসহ বিভিন্ন চরে ধানের পাশাপাশি সবজি চাষ চলছে বছরের পর বছর ধরে। এসব চরে এ বছর শত শত হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে নৌপথে চলে যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি বাজারে। এছাড়া জেলা সদর ভোলার মাঝের চরের উৎপাদিত ক্যাপসিকাম দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। যা এখানকার চরাঞ্চলের কৃষি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছে। দৌলতখানের মদনপুর চরের কৃষক হেলালউদ্দিন জানান, বিগত বছরের মতো এ বছরও মদনপুরে সবজির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এখানকার দুই শতাধিক চাষি সবজি আবাদ করছেন। তাদের সবার খেতের ফসলই ভালো হয়েছে এবং এতে তারা বেশ খুশি। দস্তগীর সিকদার বলেন, চরের জমিতে এখন ফসলের সমারোহ। এবার ফসলের খেতে শসা, খিরা, চিচিঙ্গাসহ সবজির চাষ আশানুরূপ হয়েছে। এখানকার সবজি ভোলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
সবজি চাষি মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ বছর তিনি দুই একর জমিতে চিচিঙ্গার চাষ করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত আড়াইলাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। সামনে আরো ৫ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হবে আশা করি। মাঝের চরের ক্যাপসিক্যাম চাষি মো. আবি আব্দুল্লাহ বলেন, এ বছর ৪ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ২ একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছি। মাঠে যে ক্যাপসিকাম আছে তা আরো ৫ লাখ টাকা মূল্যের হবে। ভোলার চরাঞ্চলে বছরের অন্য সময়টাতে ধান চাষ করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে ব্যাপক সবজির চাষ হয়। শুষ্ক মৌসুমে ৪ থেকে ৫ মাস সবজির চাষ হয় পুরো চরে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে এসব চরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিক্যাম চাষ অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ভোলার চরাঞ্চলে এ বছর সবজি আবাদ আশানুরূপ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ও বৃষ্টি সব কিছু অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা দেয়ার ফলে কৃষকরাও বেশ আগ্রহী ছিলেন চাষাবাদে। বর্তমানে সবজির বাজার দরও অনেক ভালো।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, এ বছর জেলায় ৯ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর সবজি আবাদ হয়েছে চরাঞ্চলে। ওইসব জমির ফলন ভালো হয়েছে। একদিকে যেমন আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো অন্যদিকে পোকাণ্ডমাকড়ের আক্রমণও কম ছিলো। তাছাড়া এবছর শীতে কুয়াশার তেমন প্রভাব পড়েনি। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে ভোলার জমিতে উৎপাদিত সবজি কম মূল্যে কিনতে পেরে যেমনি খুশি ক্রেতারা তেমনি ভালো মূল্য পেয়ে খুশি এখানকার কৃষকরা।