ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখি বেড়েছে

হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখি বেড়েছে

এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বিষটোপ, আর বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে দিন দিন পরিযায়ী জলচর পাখির সংখ্যা কমছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখ সিএনআরএস ও বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের সহযোগিতায়। দুইদিনব্যাপী হাকালুকি হাওরে পাখি জরিপ করা হয়েছে। এ বছরের শুমারিতে হাকালুকিতে সর্বমোট ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে পিংলা বিলে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বেয়ারের ভূতি হাঁস ২টি, নাগুয়া-লরিবাই বিলে বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির বৈকাল তিলিহাঁস ১টি, প্রায় সংকটাপন্ন ফুলুরি হাঁস ৩টি, প্রায় সংকটাপন্ন মরচে রং ভূতিহাঁস ১৫৮৮টি, প্রায় সংকটাপন্ন উত্তুরে টিটি ৬টি, সংকটাপন্ন কালো মাথা কাস্তেচরা ৩৯৩টি এবং বিশ্বব্যাপী বিপন্ন পাতি ৯০৯টি। এছাড়াও পিয়ং হাঁস ৫৫৫২টি, উত্তুরে ল্যাঞ্জ্যা হাঁস ৪২৭২টি, এশীয় শামুকখোল ৪২২৮টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ৪৫টি বিলে জরিপ করে এতথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৭৩০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে খাবারের সন্ধানে ছুটে আসে বাংলাদেশে। আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয়ে হাকালুকি হাওরের মতো জলাশয় গুলোকে। প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হাওরে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৭৩টি বিল। ২০২৩ সালের পাখিশুমারির জরিপে হাকালুকিতে এসেছে প্রায় ২৫ হাজার পাখি। এ বছরের শুমারীতে এসেছে ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি। গত দুই বছরের তুলনায় এবার ১০ হাজার পাখি বেশি হলেও বিগত বছর থেকে অনেক কম। যা ২০২০ সালে ছিল প্রায় ৪০ হাজার ১২৬ পাখি। মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসতো। এ সব পাখির বেশিরভাগ মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওরে অবস্থান করতো। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে সারা বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ৩৫ শতাংশ। হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে বিচরণ করতো প্রায় ৭৫-৮০ হাজার পাখি। তার ৮০ শতাংশই হাকালুকি হাওরে ছিল। জলচর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে শুমারি দলের প্রধান শাহাদাত ওমর জুড়ীর সময়কে বলেন, প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে মৎস্য আহরণ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং কিছু কিছু জলাশয়ের প্রায় পানি শূন্য করে মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে বিলে ধান চাষের আবাদ করতেও দেখা গিয়েছে। তাছাড়া পিংলা বিলের পাশে বিষটোপ (কার্বোটাফ) দিয়ে পাখি শিকার, নাগুয়া বিলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি শিকার স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। হাতেনাতে ধরে জাল নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পরিত্যক্ত মাছ ধরার ফাঁদ সমগ্র হাওরে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান। এবারের শুমারিতে সহযোগিতায় ছিল, সিএনআরএস ও বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা হলেন, ওমর শাহাদাত, ফা-তু-জো খালেক মিলা, সুলতান আহমেদ, সাব্বির আহাম্মেদ, উজ্জ্বল দাস, আবু মুসা রাজু, মাহফুজ হিমেল এবং খোর্শেদ আলম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত