সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সব ‘অসম চুক্তি’ বাতিলের তাগিদ দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ ও সামাজিক জেয়াফত অনুষ্ঠান থেকে এ দাবি জানানো হয়। ‘বাংলাদেশের জনগণ’ নামে একটি সংগঠন এই লংমার্চের আয়োজন করে। সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ ও সীমান্ত নদীতে পানি ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ শুরু হয় গত শনিবার রাতে। বাসযোগে গতকাল রোববার সকালে লংমার্চটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এসে পৌঁছায়। পরে শিবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কিরণগঞ্জ সীমান্তে অভিমুখে লংমার্চ শুরু হয়। তবে কিছুদূর এগোনোর পর প্রশাসনের অনুরোধে পাইলিং মোড় এলাকায় গিয়ে লংমার্চ শেষ করা হয়। সামাজিক জেয়াফতের সেখানে গরু জবাই করা হয়। বাংলাদেশের জনগণের মুখপাত্র আবু মুস্তাফিজ জানান, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হলে হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে।
তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যার কেন বিচার হয় না? কেন হত্যাকাণ্ড চলছে তো চলছেই? আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাই নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। আমরা যে স্বাধীনতার কথা বলছি, সেটা আসলে পরাধীনতা। বাংলাদেশ কিভাবে কাজ করবে, কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। আমাদের ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তার সরকারও ভারতের লোকে ভরা। যে কারণে আমরা আসলে শত্রু-মিত্র চিনতে পারছি না। ভারতের সঙ্গে হওয়া বিভিন্ন ‘অসম চুক্তি’ দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন লংমার্চে অংশ নেয়া নতুন গঠিত আমজনতার দলের সদস্য সচিব তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন চুক্তি একটা হয়ে গেছে মানতে হবে। কিন্তু চুক্তির একটা ভ্যালিড গ্রাউন্ড থাকে। সেই গ্রাউন্ড যদি ভয়ের হয়। কোন একটা স্বার্থকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করে সে ক্ষেত্রে সেই চুক্তি বাংলাদেশবিরোধী চুক্তি। তাই এমন চুক্তি আমরা মানতে বাধ্য না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্ত অভিমুখে যেদিন লংমার্চ অনুষ্ঠিত হলো তার মাত্র দুইদিন আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে এক বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। বারিকুল ইসলাম নামে নিহত ওই বাংলাদেশির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বারিকুলকে।
এর আগে ৫ জানুয়ারি একই উপজেলার চৌকা সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে টানা চারদিন উত্তেজনা চলে। পরে দুই বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় পতাকা বৈঠকের পর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই ১৮ জানুয়ারি সীমান্তের আম গাছ ও ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।