ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষিতে সংগ্রাম

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষিতে সংগ্রাম

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের ফজলের রহমান ও হাফেজা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে প্রবাসী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ৩০ বছর প্রবাস জীবন শেষে ২০১৬ সাল থেকে কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে একজন আদর্শ কৃষক হয়ে উঠেছেন। সংসারে তার ১ স্ত্রী, দুই ছেলে দুই মেয়ে। শুধুমাত্র কৃষি কাজ করেই তার সংসার জীবন ভালোভাবে অতিবাহিত করে চলেছেন। গত সোমবার বিকালে তার বিভিন্ন কৃষি খেত পরিদর্শনে গেলে তিনি জানান, ২৪ এর আগস্টের শেষের দিকে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বন্যা পরবর্তী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ছাগলনাইয়া ফেনীর সহযোগিতায় তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ বছর তিনি ৫০ শতক জমিতে বাহুবলি জাতের টমেটো চাষ করেছেন। চারাগাছ লাগানোর ৪৫ ?দিন পর থেকে টমেটো বিক্রি শুরু করবেন। শুধু টমেটো বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন। শুধু টমেটো উৎপাদনই নয়, মরিচ, বেগুন, মুলা, মালটা, লেবু, আপেল-কুল, সরিষা, পুকুরে মাছ চাষ, কলা, আখসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজি উৎপাদন করে বাজারজাত করেন দেলোয়ার। গত বছর তিনি ৫০ শতক জমিতে ড্রাগন ফল গাছ লাগিয়েছিলেন। বন্যায় সব গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। টমেটো উৎপান শেষ হলে তিনি আবারো ড্রাগন ফল উৎপাদনে মন দিবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন। ৪০ শতক জমিতে ১২০টি মালটা গাছ লাগিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ভয়াবহ বন্যার কারণে গত বছর লাভের মুখ না দেখলেও এবছর লাখ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরো ৪০ শতক জমিতে সরিষা চাষ করে সাংসারিক তৈলের চাহিদা মেটানোর পর বাজারজাত করে থাকেন। সরিষা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হয়। আর তার ব্যক্তিগত ২টি পুকুরে মাছ চাষ করেন। মাছের খাবার হিসেবে তারই উৎপাদিত সরিষার খৈল উল্লেখযোগ্য। পুকুরে রুই কাতল তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছ চাষ করেও লাখ টাকা আয় করারও সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু শীত মৌসুমে সবজি উৎপাদনেই নয়, ১২ মাসই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত কৃষক দেলোয়ার। বর্ষার সময়ে এই সব জমিতে তিনি ধান উৎপাদন করে থাকেন। তার মালটা বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে ফুল আসছে। মালটা ফল পরিপূর্ণ খাওয়ার উপযুক্ত হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাকে। গত বছর যদি বন্যায় মালটা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত না হতো, তাহলে লাখ টাকা আয় করতে পারতেন। এ বছর মালটায় লাভের মুখ দেখবেন, সেই স্বপ্ন চোখে তার।

কৃষক দেলোয়ারকে অনুসরণ করে আরো কয়েকজন সবজি উৎপাদন করছেন, যা দিয়ে পুরো উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য উপজেলায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর দারিদ্র্যের কারণে আর বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি দেলোয়ার হোসেন। সংসারে সচ্ছলতা আনতে ১৯৮৯ সালে ২ লাখ টাকা খরচ করে দুবাইতে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে ৩০ বছর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও খালি হাতে দেশে ফিরেন তিনি। জীবনের পড়ন্ত বিকালে বিদেশে থাকাকালীন সিদ্ধান্ত নেন, দেশে ফিরে বাকি জীবন কৃষিকাজ করে সংসার চালাবেন। দেশে ফিরে ২০১৬ সাল থেকে শুরু করেছেন কৃষিকাজ। তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং পথ দেখাচ্ছেন অন্যদেরও। ছাগলনাইয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাফকাত রিয়াদ জানান, দেলোয়ার হোসেন একজন আদর্শ কৃষক। তার মালটা বাগানটি খুব সুন্দর ছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সৌন্দর্য্য হারিয়েছে। আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেছে। তিনি কৃষি বিভাগের বেশ কিছু প্রদর্শনী বিগত সময়ে করেছেন। তিনি শুধুমাত্র একজন আদর্শ কৃষকই নন, তিনি একজন উদ্যোক্তা। তাকে অনেকেই অনুসরণ করতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত