ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মৌসুমে শত কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় ভাসমান হাটে

মৌসুমে শত কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় ভাসমান হাটে

বিদেশের ফ্লোটিং মার্কেটের মতোই বাংলাদেশেও আছে ভাসমান হাট। যেখানে সবকিছু বিক্রি হয় ভাসমান নৌকায়। পাঁচ টাকার চা, পান থেকে শুরু করে ধান, চাল, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই ভাসমানভাবে বিক্রি হয় এই বাজারে। এ দৃশ্য দেখা যায় পিরোজপুরের নাজিরপুরের ‘বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে’।

দশের সৌন্দর্যমণ্ডিত জেলা পিরোজপুরের সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার, ‘বৈঠাকাটা’। নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদী, আর এই বেলুয়া নদীতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বাজার। তিন জেলার (গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও বরিশাল) মোহনায় এই নদী। শনি ও মঙ্গলবার বসে এই ভাসমান হাট।

আগের রাত থেকে খাল বেয়ে চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ডিঙি নৌকা বা ট্রলারে করে ভিড়তে থাকেন নাজিরপুরে। ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে সরগরম হয়ে ওঠে বাজার। অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউই পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে আসে না। এই বাজারে সবাই আসে নৌকায়। স্বাভাবিক সময়ে ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে হাট। ভৌগোলিকভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পুরোটাই নদী আর খালবেষ্টিত। পানির ওপর ভাসমানভাবে সবজি ও সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য কেনাবেচার জন্য পাকিস্তান আমলে বৈঠাকাটা বাজারের সূত্রপাত হয়। তবে কারও কারও মতে, এই বাজারের বয়স আরও বেশি। এ হাটে তরমুজ বেচাকেনার ধুম পড়ে প্রতিবছর তরমুজের সিজনে। মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, উত্তরাঞ্চল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় ব্যবসায়ী এই হাটে তরমুজ কিনতে আসেন।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পান। এক সিজনে শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় বেচাকেনা। সরেজমিন দেখা গেছে, বেলুয়া নদীতে ভাসমান বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০-৫০টি ট্রলার বোঝাই করে হাটে তরমুজ নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী, চরফ্যাশন, বরগুনার ট্রলার বেশি। অনেক ব্যবসায়ী আবার ট্রলার পাঠিয়ে লেবারদের মাধ্যমে বিক্রি করায় তরমুজ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে উঠে দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম তরমুজের হাট। দামে বনিবনা হলে ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে আরেক ট্রলারে তোলা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে ছোট নৌকায় তুলছেন। অনেক ব্যবসায়ী ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে পাশের বৈঠাকাটা বাজারে রাখা ট্রাকেও বোঝাই করছেন।

খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে তরমুজের খেত কিনে পাইকারি ধরে ভাসমান বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ষাটোর্ধ মোতাহার আলী বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ আবাদ হচ্ছে।

আমরা খেত হিসেবে তরমুজ কিনি। প্রতি বিঘা খেতের দাম পড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা শুরু করে ১২-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপর খেত থেকে তরমুজ কেটে আকারভেদে পাইকারি বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে শত (১০০টি) হিসেবে তরমুজ বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, এবছর ৫ কোটি টাকা বিক্রি করেছি এ পর্যন্ত আরও খেত বাকি আছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে লাভ ভালো পাচ্ছি। বৈঠাকাটা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালী, বরগুনার বিভিন্ন চরে আবাদ করা তরমুজের খেত কেনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর খেত থেকে পাকা তরমুজ ট্রলারে করে বৈঠাকাটাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বড় আকারের ১০০টি তরমুজের পাইকারি মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের তরমুজ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ছোট তরমুজ আকার ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। হাট থেকে তরমুজ স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বড় ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। পাশাপাশি অনেকে সিজনি তরমুজ বিক্রেতা আছে তারাও আসে এ বাজারে এখান থেকে তরমুজ কিনে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এই হাট থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী নেছারাবাদ উপজেলার ব্যবসায়ী ওমর আলী তিনি জানান, প্রতি হাটে কয়েক কোটি টাকার তরমুজ কেনাবেচা হয় এখানে। আমিও এবারে এখান থেকে তরমুজ কিনে বিভিন্ন জায়জায় পাইকারি বিক্রি করেছি প্রায় ৪ কোটি টাকার।

গত বছর দাম চড়া ছিল সঙ্গে মালও খারাপ। এবার দাম মোটামুটি সব চেয়ে বড় বিষয় হলো মাল ভালো। চাহিদাও বেশি। বৈঠাকাটা বাজার কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাজারটি একশ’ বছরের পুরোনো। এ বাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁচামাল ট্রলারযোগে আসে ট্রলারেই হাট বসে। প্রতি বছরের নেয় এবারও তরমুজের বাজার জমজমাট। তরমুজ শেষের দিকে হলেও বাজারে এখনও শুরুর মতো ট্রলারে তরমুজ আসে। এই ভাসমান বাজারে মানুষ কেনাবেচা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কারণ হলো এখানে খাজনার পরিমাণ অন্য জায়গার তুলনায় কম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত