বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা নদীতে আবারও ভেসে উঠেছে একটি মৃত ডলফিন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন নদীর তীরে স্থানীয় জেলেরা ডলফিনটির লাশ দেখতে পান। পরে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর তালতলী সমন্বয়ক আরিফুর রহমানের সহায়তায় এটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া ডলফিনটির শরীরে গভীর আঁচড়, রক্তাক্ত লেজ ও কেটে যাওয়ার দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাছ ধরার ট্রলারের প্রপেলারের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে প্রাণীটির। পরিবেশবাদী আরিফুর রহমান বলেন, এই ঘটনা শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়, বরং এটি আমাদের সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর এক বড় হুমকির ইঙ্গিত। এভাবে ডলফিন মারা যাওয়ার অর্থ, নদীতে নির্বিচারে চলাচলকারী ট্রলার, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও দূষণ আমাদের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ডলফিন মৃত অবস্থায় উদ্ধারের খবর পেয়েছি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ডলফিনের মৃত্যু শুধু ট্রলারের ধাক্কা নয়, এটি পানি ও পরিবেশের গভীর অবনতির প্রতিফলন। আমাদের নদীগুলোর পানির গুণগতমান দিন দিন ভয়াবহভাবে নেমে যাচ্ছে। শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক, তেল ও বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান এসব মিশে নদীকে ধীরে ধীরে প্রাণহীন করে দিচ্ছে। এই দূষিত পরিবেশে ডলফিনের মতো সংবেদনশীল প্রাণী টিকে থাকতে পারছে না। এই মৃত্যুগুলো নিছক দুর্ঘটনা নয় এটা আমাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও উদাসীনতার ফল। পরিবেশ রক্ষায় এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শুধু ডলফিন নয়, সামগ্রিকভাবে নদী ও উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে তালতলী ও আশপাশের নদ-নদীতে একাধিকবার মৃত ডলফিন ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছে। পরিবেশবাদীরা দ্রুত সচেতনতা বৃদ্ধি, ট্রলার নিয়ন্ত্রণ, দূষণ বন্ধ এবং নদী ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আসছেন।