ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চালের দাম কমলেও সুবিধা পাচ্ছেন না ভোক্তারা

চালের দাম কমলেও সুবিধা পাচ্ছেন না ভোক্তারা

দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে কেজি প্রতি নতুন সরু চালে দাম ১০-১২ টাকা কমলেও দাম কমার এই সুবিধা পাচ্ছে না ভোক্তারা। এখনও খুচরা দোকানগুলোতে পুরাতন সরু চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৪ টাকায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। এই সরু চালই আবার খাজানগর মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। পুরাতন চালের থেকে নতুন উৎপাদিত চালের দামে ফারাক প্রায় ১০ থেকে ১২ টাকারও বেশি।

তবে মিল মালিকরা বলছেন, তারা সবেমাত্র নতুন ধান থেকে চাল তৈরি শুরু করেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরের আড়তদারদের ঘরে পুরাতন চাল মজুত আছে। ব্যবসায়ীরা নতুন করে অর্ডার দিচ্ছেন না। এ কারণে মিলগেটে কেনাবেচা কম, নতুন চাল মিলের জমা হচ্ছে। দাম কমলেও ক্রেতারা সুবিধা পাচ্ছেন না। দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। মে মাসের শুরুতেই পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে দেশব্যাপী। মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘বোরো মৌসুমে দেশে ধান উৎপাদন বেশি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ধান উৎপাদনে রেকর্ড হবে। এরইমধ্যে মিল মালিকরা ধান কেনা শুরু করেছেন। বিশেষ করে যশোর, সাতক্ষীরা, কালিগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকা থেকে এখন ধান সংগ্রহ করছেন কুষ্টিয়ার মিল মালিকরা। এর বাইরে হাওড় এলাকা থেকেও ধান কিনছেন তারা। মে মাস থেকে তারা পুরোদমে ধান কেনা শুরু করবেন বাজার থেকে। নতুন ধানের বাজার কিছুটা কম বলেও জানিয়েছেন মিলাররা। প্রতি মণ সরু ধান তারা কিনছেন ১ হাজার ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। আর মোটা ধান কিনছেন ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। নতুন ধান থেকে চাল তৈরি করে কেমন খরচ পড়ছে সেটা জানতে কথা হয় মিলার, ব্যবসায়ী ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে। খাজানগর মোকামের একাধিক বড় মিল মালিক বলেন, ‘নতুন ধান তারা কিনছেন ১ হাজার ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। এখন যে ধান কিনছেন সেটা একটু ভেজা। এ কারণে প্রতিমণ ধানে এখন চাল হচ্ছে ২২ থেকে ২৩ কেজির মধ্যে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও একটু কম হচ্ছে। এখন সরু ধান কিনে মিল গেটে পৌঁছানো, শুকিয়ে মাড়াই থেকে বস্তাবন্দি করা পর্যন্ত খরচ পড়ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। এরপর ২ টাকা লাভে তারা বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা নতুন চাল নিচ্ছেন। তবে তার পরিমাণ কম। মিয়া অটো রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ‘প্রতিদিন নতুন ধান কয়েক ট্রাক করে কিনছেন তারা। বিশেষ করে সরু ধান সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। এখন ধানের দাম কিছুটা কম আগের তুলনায়। যে পুরাতন ধান তারা গত মাসের প্রথম দিকেও কিনেছিলেন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় সেই নতুন ধানই এখন ১ হাজার ৬৫০ টাকার মধ্যে পাচ্ছেন। এই ধান থেকে চাল তৈরি করতে তাদের এখন খরচ পড়ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা পর্যন্ত। আগের তুলনায় ১০ থেকে ১২ টাকা কম। তবে নতুন চাল কেনাবেচা কম। চালের মজুদ বাড়ছে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরের ব্যবসায়ীরা নতুন চাল অর্ডার দিচ্ছে খুবই কম। পুরাতন চাল তাদের ঘরে মজুত থাকায় মিলগেটে দাম কমলেও সুবিধা পাচ্ছে না ভোক্তারা। তবে ধানের দাম বেড়ে গেলে সামনে চালের দাম বাড়তে পারে।’

দাম কমার সুবিধা ভোক্তার পাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে মিল মালিকরা বলেন, ‘পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ঘরে পুরাতন চাল রয়ে গেছে। তারা নতুন চাল কিনছেন না লোকসানের ভয়ে। একবার নতুন সরু চাল নিয়ে গেলে ভোক্তারা আর পুরাতন চাল কিনতে চাইবে না, এই ভয়ে অর্ডার দিচ্ছেন না। এসব কারণে ভোক্তারা সুবিধা পাচ্ছে না। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, সর্বশেষ খাজানগরে সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকায়। সেই সরু চালের দাম কমতে শুরু করেছে। পুরোদমে ধান মিলে আসা শুরু করলে চালের কেজিতে দামে ১০ থেকে ১২ টাকা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষকরা ধানে ভালো দাম পাচ্ছে। সরকার ১ হাজার ৪৪০ টাকা মোটা ধানের দাম নির্ধারণ করেছে। সেখানে মোটা চাল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার যে প্রভাব সেটা আগামী সপ্তাহ থেকে বাজারে পড়তে শুরু করবে। তখন ভোক্তারাও সুবিধা পাবে বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত