নওগাঁয় পুরোদমে শুরু হয়েছে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই। ধারদেনা পরিশোধে কৃষকরা হাট-বাজারে ধান বিক্রি করছেন। হাটে ধানের সরবরাহ বাড়ায় মণপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম কমে এসেছে। তবে ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কমে আসায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। এতে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১২ লাখ ৮৬ হাজার টন ধান উৎপাদনের আশা। জেলার বিভিন্ন মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সেই সোনালী ধান এখন কৃষকদের গোলায় উঠার অপেক্ষা। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই। মনের আনন্দে ধান কাটছেন কৃষক ও শ্রমিকরা। কর্মচাঞ্চলে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ফলন ভাল হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো আবাদে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে। এতে রোপন থেকে শুরু করে কাটামাড়াই করে ঘরে উঠানো পর্যন্ত বিঘাপ্রতি খরচ পড়েছে অন্তত ১৮-২০ হাজার টাকা। যেখানে ফলন হয়েছে ২২-২৫ মন। ফলন ভালো হওয়ায় স্বস্থির কথা জানান চাষিরা। তবে ধারদেনা করে আবাদ করে ধান ঘরে উঠানোর আগেই বাজারে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তাই বাধ্য হয়ে কম দামেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। শুরুতে ধানের দাম ভালো পেলেও সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা দাম কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম কমে প্রকারভেদে ধান বিক্রি হচ্ছে ব্রি-২৮ ধান ১০৫০ টাকা, সুভলতা ১১০০-১১৫০ টাকা এবং জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ১১০০-১২২০ টাকা মণ। তবে ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কমে আসায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। ধানের দাম কমার পেছনে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন কৃষকরা। বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবি কৃষকের।
জেলার রানীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ২৫ কাঠা জমিতে খাটো জিরা জাতের ধান রোপন করে ৩০ মণ ফল পেয়েছি। এ বছর বিঘাপ্রতি খরচ পড়েছে অন্তত ১৮-২০ হাজার টাকা। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলন ভালো হওয়ায় খুশি। একই গ্রামের কৃষক ফিরোজ হোসেন বলেন, শুরুতে ধানের দাম ভালো ছিল। জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ১৩৫০ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই ধান এখন মনে ২০০-২৫০ টাকা দাম কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ বছর ধানের উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। যদি দাম কম হয় তাহলে লোকসান গুনতে হবে। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার খর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের রাশেদুল হক বলেন, ৪ বিঘা জমিতে জিরাশাইল বোরো আবাদ কর হয়। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ২৬ মণ করে। তবে ধারদেনা করে আবাদ করতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। ঋণ পরিশোধে ১৩ মণ ধান হাটে বিক্রি করা হয়। কিছুদিন আগেও ১২৮০ টাকা মণ ছিল। এখন সেই ধান ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়েছে। হাটে ধান বেশি আসায় দাম কমেছে বলে জানায় ব্যবসায়িরা। বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসন নজরদারি বাড়ালে কৃষকদের জন্য সুবিধা হয়।
সদর উপজেলার শৈলগাছী গ্রামে কৃষক ও শ্রমিক জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা ১০ জন শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছি। প্রতিবিঘা জমির ধান কাটতে মজুরি নেয়া হচ্ছে ৪ হাজার টাকা। আগামী আরও ২০ দিন ধান কাটার কাজ করা হবে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ধানে রোগ-বালাইয়ের পরিমাণ একেবারেই কমছিল। এতে করে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তবে ধানের ন্যায্য দাম পেতে এবং সহজেই খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারে তার জন্য সবধরনের সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করা হচ্ছে। এরইমধ্যে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।