ভোরের আলো ফুটতেই বসেছে হাট। কাকডাকা ভোরে অধিকাংশ মানুষের ঘুম না ভাঙলেও সরগরম দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট। কে কাকে নেবেন, তা নিয়ে চলছে দরদাম। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল সদর বাজার কবরস্থান ও হাজী গোলাম হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে প্রতিদিন সকালে হাটের মতো দরাদরি করে বিক্রি হয় মানুষের শ্রম। টাকার বিনিময়ে এক দিনের শ্রম বিক্রি করতে সেখানে জড়ো হন উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা শতাধিক মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানুষ বিক্রির সেই হাটে একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। শ্রমিকরা জানান, এলাকায় ইরি-বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে, যে কারণে বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা। এমন কথাই বলেছে তাড়াইল উপজেলা কৃষি বিভাগ। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান কাটতে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরপরই এই হাটে নিম্ন আয়ের মানুষের কোলাহল বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূর থেকে লোকজনের জমায়েত দেখে কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশ মনে হলেও বাস্তবে এটি শ্রম বিক্রির হাট। প্রতিদিনের মতো এই বাজারে শ্রম বিক্রি করতে হাজির হয়েছেন মাহতাব উদ্দিন, আকুল মিয়া, রইছ উদ্দিন, বাচ্চু মিয়া সহ একাধিক শ্রমিক।
অত্র এলাকায় ইরি-বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে, তাই শ্রমিকদের দৈনিক ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে সারা দিনের শ্রম বিক্রি করছেন বলে তারা জানান। হাটে আসা শ্রমিকদের কেউ গেরস্থদের কাজ সম্পন্ন করার চুক্তিতে কাজে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ দৈনিক হাজিরায় কাজে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এই হাটকে সবাই ‘কামলার হাট’ বলেই জানেন।
কাজের জন্য আসা সেকান্দরনগর গ্রামের আবদুল মজিদ জানান, বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় এখন। মাঠভরা পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষকের তোড়জোড় চলছে। তাই শ্রমিকের চাহিদা বেশি। একই গ্রামের কৃষক ইয়াসিন মিয়া বলেন, তার ৮ কাঠা জমির ধান পেকে ঝরে পড়ছে। ধান কাটতে ১ হাজার টাকা দিন হাজিরা ও দুই বেলা খাবারের শর্তে ৪ জন শ্রমিক নিচ্ছেন। সামনে শ্রমিক সংকট হলে আরও বাড়তি টাকা গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
সহিলাটী গ্রামের কৃষক আকতার মিয়া জানান, আবাদ করতে অনেক খরচ। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। শ্রমিকের মজুরি যেহেতু ১ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। খাবার দিতে হচ্ছে দুই বেলা। ধানের দামের সমান শ্রমিকের মজুরি। এবারের বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও খরচ অনুসারে দাম না পাওয়ায় ধান আবাদ করে পোষাবে না। তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিকাশ রায় বলেন, আমাদের উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে ফসল রক্ষায় দ্রুত ধান কাটা প্রয়োজন। কিছু এলাকায় হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। আবার অনেকেই শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে।