ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নওগাঁয় কাঁচামরিচের দামে লোকসানে কৃষক

নওগাঁয় কাঁচামরিচের দামে লোকসানে কৃষক

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মরিচের আবাদ ভালো হয়েছে। আর উৎপাদন ভালো হওয়ায় নওগাঁর হাট-বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় উৎপাদন খরচই উঠছে না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। কাঁচামরিচ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১০-১৫ টাকা কেজি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় এ বছর ৯৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। যা থেকে শুকনা মরিচের উৎপাদন হবে ৯ হাজার ৬০০ টন। জেলার বিভিন্ন মাঠে এখন দেখা মিলছে মরিচের খেত। সবুজ পাতার আড়ালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরিচ। কৃষকরা স্থানীয়, সাদা ও আকাশী জাতের মরিচের আবাদ করেছেন। সকাল-বিকেল খেত থেকে মরিচ তুলে বিক্রি করছেন বিভিন্ন হাট-বাজারে। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় খেতে রোগবালাই কম হয়েছে।

সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর সাপ্তাহিক শুক্র ও মঙ্গল হাটবার। কৃষকরা ভোরে আলো ফোটার পর এ হাটে মরিচ বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। পাইকার ও কৃষকদের দরকষাকষিতে চলে বেচাকেনা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১২-১৫ টাকা কেজি। এইদামে মরিচ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে জানান চাষিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মরিচ চলে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। হাটে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মরিচ বেচাকেনা হয়। জেলার বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বাবুল।

এ বছর ৮ কাঠা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। জমি চাষাবাদ, চারা রোপণ, সার ও শ্রমিকসহ যেখানে খরচ পড়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করেছেন দেড় হাজার টাকা। কৃষক মতিউর রহমান বাবুল বলেন- জমি থেকে মরিচ শ্রমিকদের মজুরি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা কেজি। আর হাটে গিয়ে মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ১০-১২ টাকা কেজি। সপ্তাহে জমিতে কীটনাশক দিতে হয় ৬০০ টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি। তারপরও আশায় আছি আগামীতে ভালো দাম পাওয়ার।

একই গ্রামের কৃষক ডিএম ইকবাল কবির বলেন, গত বছর এ সময় প্রতিকেজি মরিচ ১২০-১৫০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি হয়েছে। আর এখন ১০-১২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যেখানে আমাদের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩০ টাকা কেজি। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে। পারসোমবাড়ী গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন- ৩ বিঘা জমিতের মরিচের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘাতে মরিচ চাষে খরচ হয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা। যেখানে খরচ বাদে লাভ থাকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। তবে মৌসুমের শুরু থেকেই মরিচের দাম কম। আর যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে লোকসান গুইতে হবে।

সদর উপজেলার ব্রুজরুক আতিতা গ্রামের কৃষক রাসেল হোসেন বলেন- মরিচের অবস্থা খুবই খারাপ। খেত থেকে মরিচ তুলতে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় ৩০০ টাকা। সঙ্গে একবেলা খাবার এবং এক কেজি চাল। মরিচ গাছে রেখে দিলে ফুল আসবে না এবং গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই লোকসান করেই মরিচ গাছ থেকে তুলতে হচ্ছে। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর এসময় খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে খেতেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এতে উৎপাদন কম হওয়ায় দামও বেশি ছিল। তবে এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের উৎপাদন বেড়েছে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে মরিচখেত সতেজ ও ছত্রাকমুক্ত রাখতে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আগামীতে কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত