চট্টগ্রামের হাটহাজারী বাসস্ট্যন্ডের যানজটে হাটহাজারীবাসী অতিষ্ঠ। বাসস্ট্যন্ড হতে দক্ষিণে কয়েক কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের অক্সিজেন ও উত্তরে নাজিরহাট ফটিকছড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিনিটে বাসস্ট্যন্ডের কাছাকাছি পৌঁছলেও বাসস্ট্যান্ড হয়ে বাজার যেতে সময় লাগছে কয়েকগুণ বেশি সময় অন্যদিকে বাজার হয়ে বাসস্ট্যন্ড একই সময় নিচ্ছে। তবে যানজটের সারি আজিমপাড়া এবং হাটহাজারী মাদ্রাসাও অতিক্রম করছে প্রায়শই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাসস্ট্যন্ড থেকে দক্ষিণ দিকে শেরে বাংলা মাজার পার হয়ে আজিমপাড়া পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পশ্চিমাংশে যানজট যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে হাটহাজারী বাজারস্থ ত্রিবেণী মোড় থেকে মাঝে মাঝে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে থেকে বাসস্ট্যন্ড পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। তবে বাসস্ট্যন্ড পার হলেই ছোটবড় যানবাহনগুলো অনায়াসে শহরের দিকে ছুটে চলে। চট্টগ্রাম হতে হাটহাজারী বাসস্ট্যন্ড হয়ে রাউজান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ির উদ্দেশ্য অসংখ্য ছোট বড় যানবাহন চলাচল করে। রাউজান রাঙামাটির উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা গাড়ি বাসস্ট্যন্ড পার হতে পারলেই যানজটমুক্ত।
অন্যদিকে নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ির উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা গাড়ি বাসস্ট্যন্ড পার হলেও হাটহাজারী বাজার, মাদ্রাসা গেইট এমনকি মাঝে মাঝে হাটহাজারী মেডিকেল পর্যন্ত যানজটে আটকা থাকে। যানজটের কারণ হিসেবে বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অতিরিক্ত সিএনজি অটোরিকশাকে বেশি দায়ী করছেন প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ। একইসঙ্গে বাসস্ট্যন্ডের গোল চত্বর, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, ছোট ছোট যানগুলোর ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠা অবৈধ ভাসমান দোকান, বাজার, অতিরিক্ত পথচারী যানজটের অন্যতম কারণ। কয়েকমাস আগেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পৌরসভা এলাকায় অবাধ চলাচল নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকটা যানজটমুক্ত ছিল পৌরসভাবাসী তথা হাটহাজারীবাসী।
বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রতি প্রশাসনের তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় বেড়ে গেছে তাদের দৌড়াত্ব। সম্প্রতি হাটহাজারী-রাঙামাটি সড়কস্থ কলেজ গেইট এলাকায় যানজট মুক্তকরণের লক্ষ্য নিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ দুটি ইউটার্নের ব্যবস্থা করে। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ছোট বাহনগুলো ইউটার্নের সঠিক ব্যবহার মানছেনা। তারা উল্টোপথে চলাচল করার কারণে প্রায়শই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।
বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। এনিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে হাটহাজারী জাগৃতি মোড় হয়ে ত্রিবেণী মোড় পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ হেঁটে চলা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। একগুয়েমি ভাব, ইচ্ছেমত পার্কিং যেমন যানজট সৃষ্টি করছে তেমনি অনিয়ন্ত্রিত দ্রুতগতি মানুষকে আতঙ্কে রাখছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে শুরু করে হাটহাজারী বাজার, বাসস্ট্যন্ড পর্যন্ত সড়কের দু পাশে অবৈধ ভাসমান দোকান গড়ে উঠায় যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।
ফুটপাত দখল করে অতিরিক্তহারে ভাসমান দোকান গড়ে উঠায় পথচারীরা পড়ছে দুর্ভোগে। পথচারীদের চলাচলের পথ দখলে যাওয়ায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন ফলে সড়কে চলাচলরত যানবাহনের সঙ্গে ছোটখাটো ধাক্কাধাক্কি লেগেই আছে। এছাড়া সড়ক লাগোয়া বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দক্ষিণে বিভিন্ন মুদির দোকান, গ্যারেজ, হোটেল, স্টিল ফার্নিচার দোকানের মালামাল ফুটপাতে রেখে ফুটপাত দখলে রাখেন বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে সতর্ক কিংবা নামেমাত্র জরিমানা আদায় করায় অভিযানের ফলাফল শূন্যই থাকে।
অন্যদিকে বাসস্ট্যন্ড এলাকায় পুলিশ বক্সের সামনে মহাসড়ক দখল করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা পার্কিং করায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশ মৌখিকভাবে, কখনও বাঁশির সাহায্যে কখনও বা গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পার্কিংয়ে বাধা দিলেও চালকরা কোনো কর্ণপাত করে না। এযেন তারা সবাই বধির। তবে আগের মতো মামলা হলে এ সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পাওয়া যেত বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্ব পালনকারীরা। পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের উদ্দেশ্যে বের হওয়া বাস মিনিবাস যানজটের জন্য দায়ী।
নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যস্থলে যাত্রার নিয়ম থাকলেও চালকের কারণে তা বিলম্ব হয়। বাসের সামনের অংশ সড়কে উঠিয়ে দাড়িয়ে থাকায় নাজিরহাট কিংবা রাঙামাটি থেকে আসা বাসের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। বাসস্ট্যান্ড হয়ে রাঙামাটি সড়কে ভাসমান দোকানের সংখ্যা কম হলেও আধুনিক হাসপাতাল ও সড়কের পশ্চিমাংশে ছিদ্দিক মার্কেট থেকে শুরু করে উত্তরদিকে বিভিন্ন সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পু, জীপ চাঁদের গাড়ি সড়ক দখলে রাখে। তবে এ দখল দীর্ঘদিন ধরে দৃশ্যমান হলেও দখলকারীদের নিজস্ব পার্কিংয়ের জায়গা না থাকার অজুহাতে দখলমুক্ত হয়না ওই সড়ক।
তাছাড়া হাটহাজারী-অক্সিজেন সড়কস্থ আধুনিক লাগোয়া সিএনজি গ্যাস পাম্প, শেরে বাংলা মাজারের উত্তর পাশ পেট্টোল পাম্প ও আজিমপাড়াস্থ হযরত তোফায়েল আহমদ শাহ (রহ.) মাজার গেইটের দক্ষিণ পাশের গ্যাস পাম্পের বিপরীতমুখী সিএনজি যানজটের অন্যতম কারণ। জানতে চাইলে যানজটের কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্টরা বলেন, খুব শিগগির যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।