ফেনীতে একদিনে ৪০৭ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফেনী শহরের শহিদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, একাডেমি সড়ক, হাসপাতাল রোড়, শান্তি কোম্পানি রোড়, শাহীন একাডেমি রোডসহ বিভিন্ন সড়কে কোমর পরিমাণ পানি উঠছে সীমিত ছোট গাড়ি চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। ট্র্যাংক রোড থেকে মহিপাল ৪০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা নিচ্ছে। আজাদ নামে এক ব্যক্তি জানান, সড়কে পানি ওঠায় ৩০/৪০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিয়ে এসেছেন তিনি এবং ফেনী শহরজুড়ে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কিছু কিছু দোকানে পানি ওঠে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পানি ওঠে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এছাড়া অফিস আদালতগামী মানুষকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অন্যদিকে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরী নদীর পানিতে ভেসে গেছে দুটি দোকান ঘর। ভেঙে গেছে সিলোনিয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম গদানগরের বেড়িবাঁধ। বন্ধ রয়েছে ফুলগাজী বাজার থেকে রাজসপুর সড়ক যোগাযোগ। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জানা যায়নি। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। আবারও বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফেনী শহরের অলিতে গলিতে কোথাও কোথাও সড়কে তিন থেকে চার ফুট পানি জমেছে। ডাক্তার পাড়া, শহিদ শহিদুল্লা কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস, রামপুর, পাঠানবাড়ি, একাডেমি, নাজির রোড, সদর হাসপাতাল মোড, কলেজ রোড, পেট্রোবাংলা, শহীন একাডেমি সড়ক, মিজান রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলার দাগনভূঞা, সোনাগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাস্তা-ঘাট ডুবে ব্যাপক ভোগান্তি এবং পুকুর ও খামারের ভেসে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি বৃদ্ধির কারণে পরশুরাম উপজেলার সিলোনিয়া নদীর পশ্চিম গদানগর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিয়া ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে মুহুরী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল ৭টার দিকে ফুলগাজীর রাজেশপুর সড়কের মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে দুটি দোকান নদীতে ধসে গেছে। এতে করে ওই গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
পৌর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, একের পর এক খাল দখল করে মার্কেট নির্মাণের কারণে টানা বৃষ্টিতে ফেনী শহরে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গত ১৫ বছরে শহরের পিটিআই সংলগ্ন খাল দখল করে পৌরসভার ব্যানারে মার্কেট নির্মাণ, খাজা আহমদ লেক দখল করে ৫ শতাধিক দোকান নির্মাণ, শহিদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ও তৎসংলগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পাগলিরছড়া খাল দখল করে পৌরসভার ব্যানারে মার্কেট নির্মাণের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ফারুক হোটেলের পর থেকে শহরের একাডেমি পর্যন্ত সড়কে অনুন্নত ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা সেখানকার জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেন, এখন প্রায় সব স্কুলেই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সড়ক ও স্কুলে পানি উঠায় অনেক স্কুলে এরইমধ্যে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে বোর্ড পর্যায়ে চলমান পরীক্ষা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।