ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উন্নত জাতের চারার চাহিদা মেটাচ্ছে বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার

উন্নত জাতের চারার চাহিদা মেটাচ্ছে বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার

নওগাঁর বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টারে উন্নত জাতের গাছের চারা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে কৃষক ও উদ্যোক্তা। এ সেন্টার থেকে অন্তত ২৭ জাতের বিভিন্ন ফলজ, মসলা ও শোভাবর্ধনকারী চারা মিলছে। উন্নত জাতের চারা এবং সুলভ মূল্যে পাওয়ায় চারা কিনতে ভীড় করছেন প্রান্তিক কৃষি উদ্যোক্তারা। এতে প্রতি বছরই বাড়ছে রাজস্ব। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় পর্যাপ্ত চারা পাচ্ছে না। উৎপাদন বাড়ানোর দাবি কৃষি উদ্যোক্তাদের।

চারা বিক্রি ও রাজস্ব আদায়ে কৃষির এক নতুন সম্ভবনার দ্বার খুলেছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে শুধু নওগাঁয় নয়, উত্তরাঞ্চলে পরিণত হতে পারে কৃষি উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে।

কৃষি প্রধান উত্তরের জেলা নওগাঁ। ধান ও সবজির জেলা হিসেবে পরিচিত। তবে এরইমধ্যে আমের জেলা হিসেবেও স্থান করে নিয়েছে। উন্নত জাতের চারা সরবরাহের লক্ষ্যে জেলার বদলগাছী উপজেলার জিধিরপুর গ্রামে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় হর্টিকালচার সেন্টার। শুরুতে চারার উৎপাদন কম হলেও গুণগত মান ভালো হওয়ায় কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে বেড়েছে চাহিদা। এখানে আম, লিচু, কদবেল, আঠাবিহীন কাঁঠাল, পেয়ারা ও করমচাসহ অন্তত ২৭ জাতের বিভিন্ন ফলদ, মসলা ও শোভাবর্ধনকারী চারা মিলছে। প্রতিটি চারার দাম ২ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে হওয়ায় উদ্যোক্তারা সহজেই মানসম্মত চারা পাচ্ছে। হর্টিকালচার সেন্টার থেকে উন্নত জাতের চারা পাওয়ার মাধ্যমে কৃষকরা উচ্চ ফলন, ভালো পুষ্টিগুণ এবং রোগ-প্রতিরোধী ফসল পেয়ে উপকৃত হচ্ছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছে তারা। এতে প্রতি বছর চারার চাহিদা বাড়ছে। কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে এক পরিচিত নাম হর্টিকালচার সেন্টার। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় উদ্যোক্তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কৃষি উদ্যোক্তারা বলছেন- হর্টিকালচার সেন্টারের চারার গুণগত মান ভালো এবং দামও তুলনামূলক কম। বাইরের নার্সারির তুলনায় এখানে মাতৃগাছ থেকে ভালোমানের চারা পাওয়ার নিশ্চয়তাসহ দামও ৪০-৫০ টাকা কম পাওয়া যায়। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকা চাহিদা মতো চারা পাচ্ছে না। উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্য মতে- চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ১ লাখ পিস চারা থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয় ৬ লাখ ৯৯ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬২ টাকা। চারা উৎপাদন ও পরিচর্চাসহ বিভিন্ন কাজে ৪ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছে। জেলার মান্দা উপজেলার পাজরভাঙা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা অপূর্ব সাহা বলেন- বাড়ির পাশে স্বল্প জায়গায় ফলের বাগান করার ইচ্ছা। বাড়ি থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে হর্টিকালচার সেন্টারের এসে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের ৮৫ পিস চারা কেনা হয়েছে। প্রতিটি চারার দাম ৬০ টাকা। যা বাইরের তুলনায় অন্তত ৪০-৫০ টাকা কম দামে পাওয়া গেছে এবং উন্নত ও ভালো মানের। দূরুত্ব যায় হোক না কেন ভালো মানের চারা পেয়ে খুশি। উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আজমল হুদা বলেন- বাণিজ্যিকভাবে সাড়া পাওয়ায় ফল ও শোভাবর্ধনকারীসহ বিভিন্ন জাত নিয়ে কাজ করা হয়। উন্নত জাতের মাতৃগাছ থেকে কাটিং কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা। ভালো মানের চারা পাওয়ায় উপকৃত হচ্ছে কৃষি উদ্যোক্তারা। বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (এলআর) কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত বলেন- খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা প্রদানে কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে পতিত ও অব্যবহৃত জমি ফলবাগানের আওতায় আনা হচ্ছে। উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করায় এবং সুলভ মূল্যে পাওয়ায় উপকৃত হচ্ছে কৃষি উদ্যোক্তারা। তবে জমির পরিমাণ কম হওয়ায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্তত ১০ একর জমি হলে চারা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হতো। উৎপাদন বাড়ানো গেলে রাজস্বের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানান এ তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত