ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

৪৭ বছরেও কাটেনি শিক্ষক সংকট

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ
৪৭ বছরেও কাটেনি শিক্ষক সংকট

আজ ২২ নভেম্বর। ৪৭তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) দিবস। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ৪৭ বছরে পদার্পণ করছে। দীর্ঘ এ পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির যেমন রয়েছে নানা অর্জন ও সাফল্য তেমনই কিছু অপ্রাপ্তিও রয়ে গেছে। যার ফলে এ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। প্রতিষ্ঠার প্রায় চার যুগ পরেও একাধিক সংকট আর অপূর্ণতা নিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব অপূর্ণতার মধ্যে প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকট অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৯টি অনুষদভুক্ত ৩৬টি বিভাগে অধ্যয়নরত ১৯,৮৯৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছে মাত্র ৪১১ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৪১ শতাংশ। এছাড়া তাদের অনেকেই আবার শিক্ষা ছুটিতে আছেন দেশের বাইরে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে প্রয়োজন একজন শিক্ষক। অথচ ৪৮ জন ইবি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একজন শিক্ষক। এছাড়া বেশির ভাগ বিভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে অনুমোদিত পদসংখ্যার ধারেকাছেও নেই। ফলে শিক্ষার গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সংকটে থাকা বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় আছে কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হওয়া এই বিভাগটির ৫টি ব্যাচের বিপরীতে মাত্র তিনজন প্রভাষক রয়েছে।

জানা যায়, চরম শিক্ষক সংকটে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি বিভাগ। ধার করা শিক্ষকই যাদের ভরসা। এ তালিকায় রয়েছে সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ, সমাজকল্যাণ এবং কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত মার্কেটিং বিভাগ, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। এছাড়া বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ, প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি বিভাগ এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ, কলা অনুষদভুক্ত ফাইন আর্টস এবং আইন অনুষদভুক্ত ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ। এসব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানালেও কার্যত কোনো সুরাহা মেলেনি। বিভাগীয় সভাপতিদের অভিযোগ, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব ও অব্যবস্থাপনায় এ সংকট নিরসন হচ্ছে না। এদিকে চারুকলা বিভাগের ৬টি ব্যাচের ১৭টি ডিসিপ্লিনের একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক থাকায় নতুন নিয়োগের দাবিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাতটি বিভাগে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তীব্র শিক্ষক সংকটে এসব বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। অল্পসংখ্যক স্থায়ী শিক্ষক ও অন্য বিভাগের ধার করা শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে চলছে এসব বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম। এতে বিভাগগুলোতে তীব্র সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কিছু বিভাগ সেশনজট কাটিয়ে উঠলেও মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি এসব বিভাগের শিক্ষকদের অতিরিক্ত কোর্স পড়ানোর চাপ সামলাতে হচ্ছে। এতে একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষকদের। এসব ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সংকট সমাধানের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষক সংকট কাটাতে আমরা কাজ করছি। পাঁচটি বিভাগে পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আরও ছয়জন শিক্ষকের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা অতিদ্রুত আরও বেশকিছু পদের অর্থছাড় নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে আলাপ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক সংকট অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আশা রাখি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত