ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

টাঙ্গাইলে অনুমোদনহীন অটোরিকশায় যানজট

টাঙ্গাইলে অনুমোদনহীন অটোরিকশায় যানজট

টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রায় প্রতিটি সড়কে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রিকশা-অটোরিকশা চলাচলে অসহনীয় যানজটে শহরবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সীমাহীন যানজটে অফিস টাইমে স্থবির হয়ে পড়ছে শহরের রাস্তাঘাট। ঘণ্টর পর ঘণ্টা যানজটের কবলে আটকা পড়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে অফিস যাত্রী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স শাখা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছয় হাজার এবং পায়ে চালিত বা প্যাডেল রিকশা রয়েছে পাঁচ হাজার। বাস্তবে শহরে এর ৩-৪ গুণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এই বাড়তি রিকশাগুলো টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে ৩০টির অধিক অনুমোদনহীনভাবে গড়ে ওঠা কারখানায় তৈরি করে শহরের সড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ওইসব রিকশা-অটোরিকশার পাশাপাশি টাঙ্গাইল শহরে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ১২৮টি পরিবহন, সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, আদালতের যানবাহন, চিকিৎসক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির পাশাপাশি গড়ে প্রতিদিন তিন সহস্রাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করছে। একই সঙ্গে ইমারত তৈরির সরঞ্জামাদি ও বালুবাহী ট্রাক-ড্রামট্রাক সব সময় শহরে চলাচল করছে। ফলে শহরের জেলা সদর রোড, বেবিস্ট্যান্ড, শান্তিকুঞ্জ মোড়, মেইন রোড, নিরালা মোড়, পার্কবাজার মোড়, ক্যাপসুল মার্কেট, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সুপারি বাগান মোড়, কলেজ গেট, নতুন বাস টার্মিনাল, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়মিত যানজটে আটকা পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শহরজুড়ে লাগামহীন যানজট লেগে থাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে দুই শিফট চালু করা হলেও বালুবাহী ট্রাক-ড্রামট্রাক ও ইমারত তৈরির সরঞ্জামাদি যানবাহন চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না।

অনুমোদনহীনভাবে গড়ে ওঠা ওইসব কারখানার অধিকাংশ মিস্ত্রিদের কোনো ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ বা শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরিকৃত এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে। এছাড়া প্রশিক্ষণহীন অদক্ষ চালকদের হাতে এসব রিকশার হ্যান্ডেল বা স্টিয়ারিং থাকায় শহরের সড়কগুলোতে প্রতিদিনই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব রিকশা-অটোরিকশাগুলোর ব্যাটারি চার্জ করতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যয় হওয়ায় দিনদিন শহরে লোডশেডিং বাড়ছে। শহরের যানজট নিরসনে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার কারণে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

শহরে বসবাসকারী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, জুয়েল রানা, সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়া, শিক্ষিকা সেলিনা হোসেনসহ অনেকেই জানান, শহরের বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। এর সঙ্গে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম্বারবিহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা। ফলে ব্যস্ততম সময়ে শহর একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে। শহরে চলাচলকারী রিকশা চালকদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না থাকায় যত্রতত্র পার্কিং ও উঠা-নামা করার কারণে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এসব অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) শাহীন মিয়া জানান, তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা তৈরি আইনগতভাবে বৈধ নয়। এ ধরনের কোনো রিকশা তৈরির কারখানার সন্ধান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক (উপ-সচিব) শিহাব রায়হান জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে কোনো ব্যাটারি চালিত রিকশা বা অটোরিকশার লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি। টাঙ্গাইল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশামুক্ত শহর গড়তে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে।

এছাড়া এই অবৈধ রিকশাগুলো আটক করে ডাম্পিং করা যায় কি-না সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব দ্রুতই এসব অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত