ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জে ৩০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

নারায়ণগঞ্জে ৩০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

শুক্রবার সকালে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো চিহ্নিত ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) যৌথভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ অভিযান শুরু করেছে। এরআগে নবনিয্ক্তু জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির জরুরি সভা ডেকে তিন সংস্থার সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করেন। প্রতিটি টিমে আছেন ইউএনও বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র কর্মকর্তা, উদ্ধার অনুসন্ধান টিম, নাসিকের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, বিল্ডিং ইন্সপেক্টর ও স্থানীয় থানার প্রতিনিধি। সকাল ১০টা থেকেই টিমগুলো শহরের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে পরিদর্শন শুরু করে। এদিকে ভূমিকম্পের পর নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো পরিদর্শন করেন। গতকাল শনিবার বিকালে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল ও হাউসিং এলাকায় রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের একটি টিম নিয়ে এই কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের কাছে অন্তত ৬৭টি অভিযোগ জমা পড়েঠে বাড়িতে ফাটল, সিঁড়ির ঢাল, কলামের দুর্বলতা কিংবা দেয়াল ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা নিয়ে। অবস্থা পর্যালোচনায় তিন ধাপের টিম গঠন করা হয়। প্রথম দিনের নজর ছিল পুরোনো ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় চাষাড়া, টানবাজার, দেওভোগ বাবুরাইল, নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক, খানপুর হাসপাতাল এলাকা, গোগনগর শাহীবাজার, ফতুল্লা ও শিমরাইল-সিদ্ধিরগঞ্জ বাণিজ্যিক জোন। এই এলাকাগুলোতে বহু বছর ধরে নকশাবহির্ভূত ভবন, বয়স জনিত ক্ষয় ও অপরিকল্পিত উচ্চতার কারণে ঝুঁকি বেশি। টিমের সদস্যদের ভাষায়, ‘ভূমিকম্প শুধু লুকিয়ে থাকা সমস্যাগুলো চোখে আনে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, অন্তত ৩০টি ভবনে মাঝারি থেকে গুরুতর ফাটল দেখা গেছে। ৯টি ভবনে সিঁড়িঘর ও কলামের স্পষ্ট ঢাল লক্ষ্য করা হয়েছে। সেমিপাকা বা পুরোনো ১৮টি দোতলা বাড়িতে বড় ধরনের দেয়াল ফাটল ধরা পড়েছে। টানবাজার দেওভোগ এলাকায় ৬টি ভবনের রিবার ক্ষয় এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে ধসের আশঙ্কা রয়েছে। গোগনগরের তিনটি বাড়ির দেয়াল আংশিক ধসে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, অন্তত ১৪টি ভবনে গ্যাস লিকেজ বা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের ঝুঁকি পাওয়া গেছে। সেসব ভবনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ সাময়িক বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নাসিক বলছে, শহরের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা ছিলই, ভূমিকম্পের পর তা আরও হালনাগাদ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে ভবন ঝুঁকির ইস্যুটি নতুন নয়। এরআগে ২০২৩ সালে নাসিক ৪২টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। এরমধ্যে মাত্র ১২টি অপসারণ করা যায়, বাকি ৩০টি রয়ে গেছে। শতবর্ষী পুরোনো ভবন, নকশাবহির্ভূত নির্মাণ আর মামলা-ঝামেলায় আটকে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িগুলো এখনও পথচারী ও বাসিন্দাদের জন্য ‘ঝুলন্ত বিপদ’ হয়ে আছে। মথুয়া রায় রোডের দস্তগীর আহম্মেদের বাড়ি, মহিম গাঙ্গুলি রোডের ১২০ বছরের পুরোনো সাধনা ঔষধালয়ের ভবন, নিতাইগঞ্জ বিকে দাস রোডের কয়েকটি পুরোনো স্থাপনা সবই তালিকাভুক্ত।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘নকশার বাইরে নির্মাণ হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবেই। এর তদারকি সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের কাজ, প্রয়োজনে ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের।’ তার মতে, বহু বছর ধরে মালিকদের প্রভাব, দুর্বল তদারকি ও কর্তৃত্বসংক্রান্ত জটিলতায় ঝুঁকি দূর হচ্ছে না। রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পে তিন হাজারের বেশি ভবন জরিপের পর নারায়ণগঞ্জে আটটি ভবনকে ‘অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়। এর বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কদম রসুল কলেজ, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি মহিলা কলেজ ও দোলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন। কিন্তু বিপদের মধ্যেও কোথাও কোথাও চলছে তলা বাড়ানোর কাজ।

ভবন পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রায়হান কবির বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে এখন পর্যন্ত ২৫টি বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। আমাদের ধারণা, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।’ পোশাক কারখানা সম্পর্কে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একটি পোশাক কারখানার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যান্য ভবন সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ সময় সিটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে তাদের একটি নকশাবহির্ভূত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত