ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করুন

শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করুন

এবার বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট প্রণয়নের সুযোগ পেয়েছিল। বলা হয়েছিল বিভিন্ন সংস্কারের কথা। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে এবার ভিন্ন কিছু করার সুযোগ ছিল।

শিক্ষার জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের প্রায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগের বাজেটের চেয়ে মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ইউনেসকোর সুপারিশ হলো, জিডিপির অন্তত ৪-৬ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ করা। এবার উভয় খাতেই বরাদ্দ গত বাজেটের তুলনায় বেড়েছে খুবই সামান্য। জিডিপির ৪-৬ শতাংশ তো দূরের কথা, ৩ শতাংশেও পৌঁছায়নি। এ রকম কম বরাদ্দের কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দও আশানুরূপ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে স্বাস্থ্য খাতের আদর্শ বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ। বিশ্বের ৫১টি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের বাজেটের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। ভুটান তাদের মোট জাতীয় বাজেটের ৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়। অথচ বাংলাদেশে এই দুই খাতে গড়ে জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ ও ৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট জাতীয় আয়ের (জিডিপি) দিক থেকেও এই বরাদ্দ অনেক কম, ২ দশমিক ৩ শতাংশের কাছাকাছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ ক্ষেত্রে আদর্শ বরাদ্দের পরিমাণ হওয়া উচিত ৫ শতাংশ। নেপালে এই বরাদ্দের পরিমাণ ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য ব্যয় করে ১০ শতাংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোর মতোই অবহেলিত থেকে গেছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা, বরাদ্দ করা অর্থের ৬৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের বেতন-ভাতাতেই ব্যয় হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় ব্যয় হয় খুবই কম।

এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, মোট স্বাস্থ্যব্যয়ের ৭২ শতাংশই সাধারণ মানুষ বহন করে থাকে। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড ভালো নয়। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা বাজেট বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিতে বলেছেন। দেশের শিক্ষা খাতেরও সিংহভাগ ব্যয় হয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে। সেই তুলনায় শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে ব্যয় হয় যৎসামান্যই। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদও জানিয়েছেন, ভৌত অবকাঠামোর চেয়ে জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেছেন, ‘এ বছরের বাজেটে আগের বছরের তুলনায় তেমন বাড়েনি। শিক্ষা খাত অনেক দিন ধরে স্থবির রয়েছে। এই বাজেটেও তা থেকে উত্তরণের কথা নেই। কাজেই বলতেই হয়, আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি তারা হতাশ।’

বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, এই হতাশা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। যেহেতু বাজেট প্রস্তাবিত পর্যায়ে রয়েছে, যদি সম্ভব হয় এই বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন। কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করেছিল। স্বাস্থ্য খাতে এর কাছাকাছি বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, সরকার সেটা ভেবে দেখতে পারে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও বরাদ্দের পরিমাণ জিডিপির ৩ শতাংশ করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

তবে এটাও ঠিক, বাজেট বরাদ্দে অর্থসংকট রয়েছে। আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই সরকারকে সামনে এগোতে হবে। এ কথাও মনে রাখতে হবে, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অভিমুখে যাত্রা করছে বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম থাকবে দেশের। বাংলাদেশের এই যাত্রাপথকে যদি মসৃণ করতে হয়, তাহলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী স্বাস্থ্যবান মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্যই এই বরাদ্দ বৃদ্ধির দিকটা সরকারের বিবেচনা করে দেখা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত