পৃথিবীতে যতগুলো ভালোকাজ আছে সেগুলোর মধ্যে বৃক্ষরোপণ অন্যতম। শুধু মানুষ নয় বরং সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ ও নিঃসরণের যে চক্র তা নিয়ন্ত্রণ করে গাছপালা, বৃক্ষ-তরুলতা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশ-প্রকৃতিকে রক্ষা করতে বৃক্ষ প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই যে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা, সূর্যের তাপে মানুষ পুড়ছে- এর পেছনেও বৃক্ষ সংকটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই, বৃক্ষরোপণ একটি জীবন্ত সাদকাহ। এ সম্পর্কে নবী মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা খেতে ফসল বোনে। আর তা থেকে কোনো পোকামাকড় কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২০)। সীমিত সময়ের জন্য, বৃক্ষ থেকে ফুল-ফল, ছায়া কিংবা জ্বালানি এসব উপকারের কথা আমরা বাদ দিলাম; কিন্তু জীবজগতের অস্তিত্ব টিকে থাকে যে বৃক্ষের দ্বারা সেগুলোর ঋণ কী করে আমরা ভুলে যেতে পারি? মানুষের বাঁচা-মরা নির্ভর করে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড চক্রের ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ প্রতিদিন ১১ হাজার লিটার বাতাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকে, যা সে বৃক্ষ থেকে বিনামূল্যেই পায়। বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন ৫৫০ লিটার খাঁটি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যদি এই সমপরিমাণ অক্সিজেন টাকা দিয়ে কিনতে হতো তবে প্রতিদিন তাঁকে ১৮-২০ লাখ টাকা খরচ করতে হতো! যা বৃক্ষের মাধ্যমে আমরা সহজে এবং বিনামূল্যে পেয়ে থাকি। বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী প্রতি বছর জুন, জুলাই, আগস্ট মাসে বৃক্ষরোপণ করার উপযুক্ত সময়। চলতি জুন-জুলাই-আগস্ট মৌসুমে আমরা প্রত্যেকে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগাতে পারি। অন্যদেরও বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। তাহলে আমাদের এই উদ্যোগ জাগতিক সুফলের পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে সাদকাহ হিসেবেও কবুল হবে।
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।