ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফল খাওয়ার নামে বিষ খাচ্ছি

ওসমান গণি
ফল খাওয়ার নামে বিষ খাচ্ছি

সারা দেশে এখন চলছে ফলের ভরা মৌসুম। মৌসুমি ফলের স্বাদ গ্রহণ করতে সবাই চায় এবং চেষ্টা করে তা পূরণ করতে। ফল শরীরের পুষ্টি জোগায়। শরীরকে সজীব ও সতেজ করে। কিন্তু আজকাল আমরা ফল খাওয়ার নামে কী খাচ্ছি? এককথায় বিষ খাচ্ছি। এসব ফল গাছে যখন মুকুল আসে কীট দমন, ফলের সাইজ বড় করা, রঙিন করা, এমনকি স্বাদ বেশি হওয়ার জন্য কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করা হয়। যেখানে মাত্রা, পরিমাণ, মেয়াদ প্রায় মানা হয় না। আবার নানা প্রকারের বিষ প্রয়োগে বড় হতে হতে আগাম ফল পাকাতে একধরনের হরমোন স্প্রে করা হয়। এর সঙ্গে অতি দ্রুত পাকাতে ও উজ্জ্বল বর্ণ করতে একদিকে কার্বাইড ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় ফরমালিন। এখন যেহেতু মুকুলের সময়, তাই এখনই সচেতন হওয়া উচিত। বর্তমানে ফলের রং দেখে বোঝা যায় না, কোনটা ফরমালিনবিহীন ফল। বরং ফরমালিনযুক্ত ফলই দেখতে অনেক টাটকা ও পাকা টসটসে দেখায়। অর্থাৎ যে ফলের চেহারা যত ভালো, সে ফল তত বেশি বিষযুক্ত এবং এই ফল শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর। ফল শরীরে ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফল খাওয়া আর বিষ খাওয়া এক কথা। টাটকা ও অধিক রং যুক্ত ফলের রসে নিহিত থাকে বিষাক্ত বিষ। সুতরাং রং দেখে নয়, বরং টাটকা ও সতেজ দেখে ফল কিনুন।

ফল খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ছোট শিশু থেকে শুরু করে, কিশোর-তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক এমনকি বৃদ্ধদেরও নিয়মিতভাবে ফল খাওয়া উচিত। প্রতিদিন কিছু পরিমাণে হলেও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। ডাক্তারি বিদ্যায় বলা হয়, ফল শুধু স্বাদের জিনিস নয়। ফল খাওয়া দরকার শরীরে মিনারেল আর ভিটামিনের চাহিদা জোগান দিতে। সেটা বেশি দেশি ফলে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বি কমপ্লেক্স রয়েছে মৌসুমি ফলে। বলা হয়ে থাকে বিদেশি ফলে ফরমালিন বা কেমিক্যাল মেশানো থাকে। এর উল্টো অর্থ হচ্ছে দেশি ফল ক্যামিকেলমুক্ত।

এই ভরসায় দেশি ফলের প্রতি আকর্ষণ এবং দুর্বলতা অনেকের। কিন্তু, নানা দুঃসংবাদ। দেশি ফলেও ফরমালিন মেশানোর ঘটনা ধরা পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়। দেশি ফলের মধ্যে প্রায় সব ফলেই ফরমালিন মেশানো হয়। ইথোফেন নামের বিষাক্ত হরমোনাল স্প্রে দিয়ে কাঁচা ফল পাকানো হয়। আবার পচা ফল তাজা রাখতেও কেমিক্যাল রয়েছে। সাধারণত কৃষিজমিতে ব্যবহার হলেও এখন কাঁচাফল পাকাতে এই স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ফরমালিনের চেয়েও ভয়ানক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তরমুজের ভেতর সিরিঞ্জ দিয়ে ক্ষতিকর এরিথ্রোসিন বি এবং স্যাকারিন পুশ করে লাল ও মিষ্টি করার কাণ্ড ও ধরা পড়েছে। বাদ পড়ছে না, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, আনারস। জাতীয় ফল কাঁঠালও এর বাইরে নয়। এক সময় ‘ঘাই’ দিয়ে কাঁঠাল পাকানোর কথা শোনা যেত। ‘ঘাই’ মানে পেরেক ধরনের একটা রড বা পাইপ দিয়ে বোটার দিক ফুটো করে দেওয়া।

এতে কাঁঠাল দ্রুত পাকে। এখন ঘাইয়ের সঙ্গে বিষও দেওয়া হয়। এ তালিকার সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত ফলের নাম কলা। বাংলাদেশে সবরি-চাপা-সাগর কলা উৎপাদন হয়। সময়ের আগে কলায় বিশেষ করে সবরি কলায় হরমোন স্প্রে করা হয়। অপরিণত কলা কেরোসিনের স্টোভের হিট দিয়ে নরম করা হয়। রাইপেন-ইথোফেন বা কার্বাইড স্প্রে করে পাকানো হয়। স্প্রে করার আগে কলা পরিষ্কার করা হয় সার্ফএক্সেল বা শ্যাম্পু দিয়ে।

পাকানোর এই বিষাক্তপদ্ধতি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলার আড়তে চলছে হরদম। সেই বিষাক্ত কলা বাজার থেকে কিনে খায় মানুষ। মৌসুমি আরেক দেশি ফল লিচুতেও পাঁচ থেকে ছয়বার কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ঝরে না পড়া, বোটা শক্ত রাখা, রং চকচকে করাসহ সব কিছুর জন্য বিষ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত